সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। গত ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেয়। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মহাসড়ক, সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এরইমধ্যে, একটি ডিজিটাল ব্যানারে “এই কোটা আন্দোলন আমাকে ফেসবুক ইউটিউবে লাখ লাখ ফলোয়ারস দিয়েছে। চাইলে আমি যে কোন সময়ে বিকাশ/নগদের মাধ্যমে আয় করতে পারছি। তাই আমার চাকুরিতে যাওয়ার ইচ্ছা জাগেনি।”- শীর্ষক মন্তব্যটি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও গণ অধিকার পরিষদের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর মধ্যে অধিকাংশ পোস্ট হাস্যরসাত্মকভাবে (সার্কাজম) প্রথমে প্রচার করা হলেও পরবর্তীতে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে সত্য ভেবে প্রচার করতে থাকে।
হাস্যরসাত্মকভাবে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
সত্য ভেবে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাশেদ খান এমন কোনো মন্তব্য করেননি, বরং জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রাশেদ খানের ভিন্ন প্রেক্ষিতে করা একটি মন্তব্যকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে উক্ত দাবিতে প্রচার করতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত বছরের (২০২৩) ০৯ এপ্রিল “ভালো চাকরি পাচ্ছেন না কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীরা” (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে একটি একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ডিজিটাল ব্যানারের সাথে আলোচিত ডিজিটাল ব্যানারটির মিল রয়েছে।
উক্ত ডিজিটাল ব্যানারে দেখা যায়, আলোচিত মন্তব্যটি নয়, বরং ভিন্ন প্রেক্ষিতে তিনি ভিন্ন একটি মন্তব্য করেছিলেন। যা কোট করে জাগোনিউজ২৪ ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করেছিল।
জাগো নিউজ২৪ এর ডিজিটাল ব্যানারে রাশেদ খানের প্রচারিত মন্তব্যটি ছিল, “তারপরও আমরা সুখী এজন্য যে, নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় করতে পেরেছি।”
এছাড়া, আলোচিত মন্তব্যটি রাশেদ খানের কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ০৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। এরইমধ্যে, একটি ডিজিটাল ব্যানারে “এই কোটা আন্দোলন আমাকে ফেসবুক ইউটিউবে লাখ লাখ ফলোয়ারস দিয়েছে। চাইলে আমি যে কোন সময়ে বিকাশ/নগদের মাধ্যমে আয় করতে পারছি। তাই আমার চাকুরিতে যাওয়ার ইচ্ছা জাগেনি।”- শীর্ষক মন্তব্যটি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও গণ অধিকার পরিষদের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাশেদ খান এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রাশেদ খানের ভিন্ন প্রেক্ষিতে করা একটি মন্তব্যকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত মন্তব্যটি প্রথমে হাস্যরসাত্মকভাবে প্রচার করা হলেও পরবর্তীতে তা সত্য মনে করে অনেককেই প্রচার করতে থাকে।
সুতরাং, কোটা আন্দোলন নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি রাশেদ খানের দাবিতে প্রচারিত করা হচ্ছে; যা স্যাটায়ার বা কৌতুক।
তথ্যসূত্র
- Jago News24- ভালো চাকরি পাচ্ছেন না কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীরা
- Rumor Scanner’s Own Analysis