এটি দোকানের দেয়ালে কোকাকোলার লোগো থাকার কারণে দোকান ভাঙচুরের দৃশ্য নয় 

ফিলিস্তিন ইস্যুতে বেভারেজ পণ্য কোকাকোলা বয়কটের ক্যাম্পেইন চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র৷ সম্প্রতি কোকাকোলার এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপন নিয়েও চলছে সমালোচনা। এর প্রেক্ষিতে একটি ভিডিও সামনে এসেছে। “বয়কট কোকাকোলা, ছাইরা দে, কাইন্দা বাঁচি” শীর্ষক ক্যাপশনে ভিডিওটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, কোকাকোলা লেখা থাকা একটি দোকানে  ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। এই ভিডিও দেখে এবং ক্যাপশন পড়ে অসংখ্য নেটিজেন ভেবে নিচ্ছেন যে “এই দৃশ্য কোকাকোলা বয়কট ক্যাম্পেইনেরই অংশ। কোকাকোলার লোগো থাকার কারণেই হয়ত দোকানটিতে ভাংচুর চালানো হচ্ছে৷” ভাইরাল পোস্টগুলোর কমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে।    

দোকান ভাঙচুরের দৃশ্য

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দোকানের দেয়ালে কোকাকোলার লোগো থাকার কারণে দোকানটি ভাঙচুর করা হয়েছে বা দৃশ্যটি কোকাকোলা বয়কট ক্যাম্পেইনে অংশ শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বরং, প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের নভেম্বরে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের। এর সাথে কোকাকোলা বয়কট ক্যাম্পেইনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশটিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ০৯ নভেম্বর “ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে মুহূর্তেই রণক্ষেত্র বগুড়া”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনের ২৭ সেকেন্ডের পর থেকে একটি দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির একটি দৃশ্যের মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রতিবাদে কর্মসূচিতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। সেই সংঘর্ষেরই দৃশ্য এটি। 

একই তারিখে আজকের পত্রিকা’য় “অবরোধবিরোধী মিছিলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, সভাপতিসহ আহত ১৩” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

অনুসন্ধানে ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে Mohasthan Tv নামক একটি পেজে গত বছরের ০৯ নভেম্বর দুপুর ১২ টা ৪৩ মিনিটে করা এই ভিডিও সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশনেও বলা হয়, এটি সরকারি আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনার। 

এই ভিডিও এবং এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদনের কোথাও দোকানে ভাংচুরের সাথে কোকাকোলা ক্যাম্পেইনের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা বলা হয়নি।  

মূলত, কোকাকোলা ইসরায়েলের পণ্য এমন অভিযোগ তুলে পণ্যটি বয়কটের ক্যাম্পেইন চলার মধ্যেই সম্প্রতি কোকাকোলার এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপন নিয়েও চলছে সমালোচনা। এর প্রেক্ষিতে  “বয়কট কোকাকোলা, ছাইরা দে, কাইন্দা বাঁচি” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামনে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কোকাকোলা লেখা থাকা একটি দোকানে  ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। এই ভিডিও দেখে এবং ক্যাপশন পড়ে অসংখ্য নেটিজেন ভেবে নিচ্ছেন যে “এই দৃশ্য কোকাকোলা বয়কট ক্যাম্পেইনেরই অংশ। কোকাকোলার লোগো থাকার কারণেই হয়ত দোকানটিতে ভাংচুর চালানো হচ্ছে৷” ভাইরাল পোস্টগুলোর কমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি দোকানের দেয়ালে কোকাকোলা লেখা থাকার কারণে দোকান ভাঙচুর করার দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রতিবাদে কর্মসূচিতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। তখনকার একটি দৃশ্যের ফুটেজ ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, বগুড়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পুরোনো ভিডিওকে দোকানের দেয়ালে কোকাকোলার লোগো থাকার কারণে দোকান ভাঙচুর করার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img