সম্প্রতি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নকল কোকা-কোলা তৈরির একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটিতে দেখানো নকল কোকা-কোলা তৈরির কারখানাটি বাংলাদেশে অবস্থিত।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)
টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নকল কোকা-কোলা তৈরির কারখানাটি বাংলাদেশের নয় বরং পাকিস্তানের।
আলোচ্য ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালের পর বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়ে একাধিক ফ্যাক্ট-চেক অনুরোধ পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। ভাইরাল ভিডিওটির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের উর্দু ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়।
পরবর্তীতে ভিডিওটির কিছু স্থীর-চিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ‘Karachi Update’ নামের পাকিস্তান ভিত্তিক একটি ফেসবুক পেজে গত ২৭ মার্চ রাত ৯টা ২৫ মিনিটে প্রকাশিত একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে উর্দু ভাষায় ব্যঙ্গাত্মকভাবে লেখা হয়, “কোকা-কোলা পান করে জীবন উপভোগ করুন, এখন থেকে আর বলবেন না যে এটি ইহুদিদের কোম্পানি। এটা আমাদের নিজের দেশ, পাকিস্তানে তৈরি।”
উক্ত পোস্টের প্রায় ২ ঘণ্টা পর ‘Saleem Lashari’ নামের পাকিস্তান ভিত্তিক একটি ফেসবুক আইডিতে একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর ক্যাপশনে ব্যঙ্গাত্মকভাবে লেখা হয়, “পেপসি এবং কোক বর্জন করবেন না, কারণ এগুলো গুজরানওয়ালাতেই এক মুসলিম ভাই তৈরি করছেন।”
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে পাকিস্তানের একাধিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নকল কোমল পানীয় তৈরির কারখানায় পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযানের তথ্য পাওয়া যায় (১,২,৩,৪)। এসব কারখানা ও আলোচ্য ভিডিওতে থাকা কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও নকল পানীয় তৈরির পদ্ধতির মধ্যে মিল লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়া আলোচ্য ভিডিওটিতে দেখানো কোকা-কোলার মোড়কে ইংরেজি ভাষায় ‘CocaCola’ ব্র্যান্ডের নাম লেখা রয়েছে। তবে, বাংলাদেশে বাজারজাত কোকা-কোলার মোড়কগুলোতে সাধারণত বাংলা অক্ষরে ব্র্যান্ডের নাম লেখা হয়।
পাশাপাশি উক্ত ভিডিওতে যে কোকা-কোলার বোতল দেখা যাচ্ছে, তা ১.৫ লিটারের। তবে কোকা-কোলা বাংলাদেশের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১.৫ লিটারের কোকা-কোলা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে কোকা-কোলার বড় সাইজের বোতলগুলো হল ১ লিটার, ১.২৫ লিটার এবং ২ লিটার। এছাড়া নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও ভাইরাল ভিডিওতে থাকা ‘নকল কোকা-কোলা তৈরির এই কারখানাটি বাংলাদেশে অবস্থিত’ এমন দাবির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া বিভিন্ন দেশের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে পাকিস্তানের নকল পানীয় তৈরির কারখানার ভিডিও এবং ছবি পূর্বেও বিভিন্ন দেশের নামে ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় (১,২,৩)।
মূলত, বাংলাদেশে নকল কোকা-কোলা তৈরি করা হচ্ছে দাবিতে একটি নকল কোকা-কোলা তৈরির কারখানার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই কারখানাটি বাংলাদেশে অবস্থিত নয়। ভাইরাল ভিডিওটিতে উর্দু ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়। পাশাপাশি, ভাইরাল ভিডিওতে থাকা মোড়ক এবং বাংলাদেশে বিক্রীত কোকা-কোলার মোড়কের লেখা এবং বোতলের আকারের বিষয়েও অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়।
সুতরাং, পাকিস্তানের নকল কোকা-কোলা তৈরির কারখানার একটি ভিডিও বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.