দৃশ্যটি ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনে ফসফরাস বোমা হামলার নয় 

সম্প্রতি, “দখলদার ইহুদিবাদী জালিমরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে, নিষিদ্ধ ফসফরাস বোমা ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের উপর” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

 ফসফরাস

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইংরেজি ভাষায় প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনে ফসফরাস বোমা ফেলার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের নয়। বরং এটি গত মার্চ মাসে রাশিয়ান বাহিনীর ইউক্রেনের ভুলেদার শহরে থার্মাইট বোমা ফেলার সময়কার দৃশ্য। 

এ নিয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে গত ১৩ মার্চ ব্রিটিশ সংবাদপত্র The Telegraph এর ইউটিউব চ্যানেলে “Russian Shells rain down on Vuhledar as fight for Donbas rages on” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, রাশিয়ান বাহিনী অগ্নিসংযোগকারী থার্মাইট বোমার সাহায্যে ইউক্রেনের শহর ভুলেদারে আক্রমণ করছে।

Screenshot : The Telegraph 

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে গত ১২ মার্চ ব্রিটিশ গণমাধ্যম The Sun এর ওয়েবসাইটে “RAINING HELL Horror moment flesh – melting thermite rain bombs blitz Ukraine town as Russia loses 1,000 men in deadliest day of the war” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির উল্লেখ রয়েছে। 

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বখমুত থেকে প্রায় ৬০ মাইল উত্তরে ভুলেদার শহরটি অবস্থিত। এই শহরে ‘থার্মাইট রেইন’ এর ভয়ঙ্কর বর্ষণ দেখা গেছে। 

এছাড়া গত ১২ মার্চ Thomas van Linge নামক একজন ফরাসি সাংবাদিকের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে “#Ukraine :Ukrainian sources report that the Russian have been using incendiary munition on the town of #Vhuledar” শীর্ষক শিরোনামে একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত টুইটেও একই ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ ভিডিওটি গত মার্চ থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান। অপরদিকে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হয় গত ৭ অক্টোবর থেকে।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ফিলিস্তিনের কোনো ভিডিও নয় এবং চলমান সংঘাতেরও নয়।

অপরদিকে গত ১২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লেবানন ও গাজায় ১০ ও ১১ অক্টোবর বিতর্কিত সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে।

এ নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন-

মূলত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে আকস্মিক এবং নজিরবিহীন মিসাইল হামলা চালায় হামাস। এরপর ইসরায়েল সীমানা অতিক্রম করে দেশটিতে প্রবেশ করে হামাস যোদ্ধারা। পরবর্তীতে ইসরায়েলও গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এর মধ্যেই মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা ও লেবাননে বিতর্কিত সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে  ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনে ফসফরাস বোমা ফেলার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটির সাথে ইসরায়েল কিংবা ফিলিস্তিনের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ান বাহিনী কর্তৃক ইউক্রেনের ভুলেদার শহরে থার্মাইট বোমা ফেলার পুরানো একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, রাশিয়ান বাহিনী কর্তৃক ইউক্রেনে থার্মাইট বোমা ফেলার ভিডিওকে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনে ফসফরাস বোমা ফেলার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে ; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img