নিউজিল্যান্ডে গত ২৪ এপ্রিলের ভূমিকম্পের ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাতটি ছবি প্রচারিত হয়েছে।
১ম ছবি –
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেখুন জাগোনিউজ২৪, জনকণ্ঠ, দৈনিক করতোয়া।
২য় ছবি –
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেখুন ডিবিসি নিউজ, ইনকিলাব, এবিনিউজ২৪, বাংলাদেশ টাইমস, বার্তা২৪।
একই ছবি ব্যবহার করে প্রকাশিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
৩য় ছবি –
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেখুন ডেইলি মেসেঞ্জার।
একই ছবি ব্যবহার করে প্রকাশিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
৪র্থ ছবি –
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেখুন নয়া শতাব্দী।
৫ম ছবি –
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেখুন সাম্প্রতিক দেশকাল।
ভারতের গণমাধ্যমে উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেখুন আজতাক বাংলা (ইউটিউব)।
৬ষ্ঠ ছবি –
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেখুন আমার সংবাদ।
৭ম ছবি –
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উক্ত ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেখুন সময় জার্নাল।
একই ছবি ব্যবহার করে প্রকাশিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে গণমাধ্যমে প্রচারিত সাতটি ছবি উক্ত ভূমিকম্পের নয় বরং সেগুলো পূর্বে বিভিন্ন সময়ের ভূমিকম্পের ঘটনার ছবি।
১ম ছবির সূত্রের খোঁজ
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম BBC এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত প্রথম ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন (২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর) নিউজিল্যান্ডে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সাউথ আইল্যান্ড এর একটি হাইওয়ের রাস্তা এই ভূমিকম্পের ফলে ভেঙে যায়।
ছবিটির সূত্র হিসেবে বিবিসি রয়টার্সের নাম উল্লেখ করেছে।
পরবর্তীতে একই ঘটনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এর ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটি তুলেছেন অ্যান্থনি ফেলেপস।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নিউজিল্যান্ডে প্রায় সাড়ে ছয় বছরের পুরোনো ভিন্ন একটি ভূমিকম্পের ঘটনার।
২য় ছবির সূত্রের খোঁজ
গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২য় ছবিটি রয়টার্সের একই প্রতিবেদনেই খুঁজে পেয়েছি আমরা। এটিও তুলেছেন অ্যান্থনি ফেলেপস।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটিও সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডের ভূমিকম্পের ঘটনার নয়।
৩য় ছবির সূত্রের খোঁজ
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, অস্ট্রেলিয়ান সংবাদ নেটওয়ার্ক The Conversion এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট Phys.org এ ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে আলোচিত তৃতীয় ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
দুইটি প্রতিবেদনেই ছবিটির ক্যাপশনে ছবির সূত্র হিসেবে Shutterstock এর নাম উল্লেখ থাকলেও ছবিটি ঠিক কোন ঘটনার সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
পরবর্তীতে স্টক ফটোগ্রাফি বিষয়ক ওয়েবসাইট Shutterstock এ আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। Shutterstock এ ছবিটি প্রকাশের তারিখ উল্লেখ না থাকলেও ছবিটি বিধ্বস্ত রাস্তার বলে উল্লেখ রয়েছে।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ছবিটি অন্তত দুই বছরের পুরোনো।
৪র্থ ছবির সূত্রের খোঁজ
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট Phys.org এ ২০২১ সালের ০৫ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত চতুর্থ ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির সূত্র হিসেবে নিউজিল্যান্ড হ্যারাল্ডের নাম উল্লেখ রয়েছে ক্যাপশনে। তাছাড়া, ছবিটি সেদিনই (০৫ মার্চ) তোলা হয়েছে বলে লেখা রয়েছে ছবিটির ক্যাপশনে।
পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম The New Zealand Herald এর ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ০৫ মার্চে সুনামি সতর্কতায় রাস্তায় মানুষের জটলার ছবি এটি।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ছবিটি অন্তত দুই বছরের বেশি সময়ের পুরোনো।
৫ম ছবির সূত্রের খোঁজ
নিউজিল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ছবি দাবিতে গণমাধ্যমের প্রকাশিত ৫ম ছবিটির উৎসের খোঁজে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘Getty Images’ এর ওয়েবসাইটে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডে একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ঘটনায় একটি ধ্বংসস্তূপের ছবি এটি।
অর্থাৎ, সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডের ভূমিকম্পের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ১৩ বছরেরও বেশি সময়ের পুরোনো।
একই ছবি নিউজিল্যান্ডে গত ১৬ মার্চের আরেকটি ভূমিকম্পের দাবিতে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
৬ষ্ঠ ছবির সূত্রের খোঁজ
নিউজিল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ছবি দাবিতে গণমাধ্যমের প্রকাশিত ৬ষ্ঠ ছবিটির উৎসের খোঁজে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ‘REUTERS’ এর ওয়েবসাইটে ২০১১ সালের ০৬ মার্চ প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ০২ মার্চ নিউজিল্যান্ডে একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ঘটনায় উদ্ধারকাজে নিয়োজিত এক উদ্ধারকর্মীর ছবি এটি।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ছবিটি ১২ বছরের পুরোনো।
৭ম ছবির সূত্রের খোঁজ
নিউজিল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ছবি দাবিতে গণমাধ্যমের প্রকাশিত ৭ম ছবিটির উৎসের খোঁজে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ০৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ঘটনায় একটি বিধ্বস্ত ভবনের ছবি এটি।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি নিউজিল্যান্ডের নয় বরং গত মার্চের তুরস্কের ভূমিকম্পের ঘটনার ছবি।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহিত, কেউ-বা ছবিসূত্র হিসেবে বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহিত উল্লেখ, বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নিউজিল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, নিউজিল্যান্ডে গত ২৪ এপ্রিলের ভূমিকম্পের ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাতটি ছবি প্রকাশের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্থান ও ঘটনার পুরোনো ছবি।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া একাধিক ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ছবি দাবিতে গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Reuters: New Zealand well-placed to meet multi-billion dollar quake bill
- AP: Turkey’s lax policing of building codes known before quake
- Reuters: New Zealand quake to cost up to £6.8 billion
- The New Zealand Herald: Apologies after Northland’s tsunami siren system set off accidentally
- Getty Images: 6.3 Magnitude Earthquake Rocks Christchurch