সম্প্রতি, দেশের কতিপয় গণমাধ্যমসহ ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় জন কংগ্রেসম্যান কর্তৃক একটি চিঠি দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পাঠানোর বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। উক্ত চিঠিটি ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছে কতিপয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে।
সংবাদমাধ্যমে উক্ত দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন বাংলা ইনসাইডার।
বাংলা ইনসাইডারের এ সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে এ সংক্রান্ত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
গত ০৫ জুন একই বিষয়ে জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ভোরের কাগজের প্রতিবেদনের শিরোনামে চিঠির সত্যতা নেই বলে দাবি করা হলেও মূল প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি যাচাই করছে বলে দাবি করেছে পত্রিকাটি। তাছাড়া, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এক কংগ্রেসম্যানের টুইটারে উক্ত চিঠিটি প্রকাশ করার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও উক্ত চিঠি রিসিভ করা হয়েছে কিনা এমন কোনো তথ্য সেখানে নেই বলে দাবি করেছে জাতীয় এই দৈনিক।
ফেসবুকের কিছু পোস্টে উক্ত চিঠিটি বানোয়াট এবং মার্কিন কোনো সিনেটর এমন চিঠি দেননি বলে দাবি করা হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে দেশটির ছয় জন কংগ্রেসম্যানের লেখা আলোচিত চিঠিটি ভুয়া শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ২৫ মে প্রকাশিত উক্ত চিঠিটি আসল বলে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে চিঠিটি ভুয়া বলে দাবির পূর্ব থেকেই চিঠিটির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত ২৮ মে মূলধারার সংবাদমাধ্যম The Business Standards এর ওয়েবসাইটে চিঠিটির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর উক্ত প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয় সংবাদমাধ্যম কর্তৃপক্ষ।
একইভাবে আরেক সংবাদমাধ্যম ‘আমাদের সময়’-ও গত ২৯ মে একই সংবাদ প্রকাশের পর তা সরিয়ে নেয়।
বিষয়টি রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসার পর অনুসন্ধান শুরু করি আমরা।
‘The Business Standards’ এবং ‘আমাদের সময়’ এর প্রতিবেদনে চিঠিটি ১৭ মে প্রকাশিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ‘The Business Standards’ এর প্রতিবেদনে চিঠিটির কোনো ছবি যুক্ত করা না হলেও ‘আমাদের সময়’ এর প্রতিবেদনে চিঠির একটি অংশের ছবি যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে কি ওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুকে একই চিঠির দুইটি সংস্করণ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। দুইটি চিঠির ভাষা এবং স্বাক্ষরকারীদের নাম এক হলেও একটি চিঠিতে ১৭ মে (আর্কাইভ) এবং অন্যটিতে ২৫ মে (আর্কাইভ) তারিখ উল্লেখ ছিল।
অর্থাৎ, একই চিঠি দুইটি ভিন্ন তারিখে (১৭ ও ২৫ মে) প্রকাশের দাবিতে ছড়িয়েছে।
চিঠিগুলোর বিষয়ে জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কংগ্রেসম্যানদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ (Jay Ostrich) গত ৩০ মে রাতে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, উক্ত চিঠিটি আসল। ২৫ মে স্বাক্ষরিত চিঠির একটি কপিও রিউমর স্ক্যানারকে পাঠিয়েছেন তিনি।
পরবর্তীতে গত ০২ জুন উক্ত চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান বব গুড তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২৫ মে লেখা চিঠিটি প্রকাশ করেন।
গত ০৬ জুন অনলাইন সংবাদমাধ্যম Just News Bd এর হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে (আর্কাইভ) জানান, “বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি সম্পর্কে হোয়াইট হাউস অবগত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)’র স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি।”
গত ০৫ জুন হোয়াইট হাউসে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্যাঁ পিয়েরের সঞ্চালনায় আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন বলে জানান মুশফিকুল ফজল আনসারী।
মুশফিকুল ফজল আনসারীর করা এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডমিরাল কিরবি বলেন, আমরা আমাদের অবস্থানে স্থির রয়েছি। এই যোগাযাযোগের (চিঠি পাঠানো) বিষয়ে আমি অবগত।
মুশফিকুল ফজল আনসারী একই পোস্টে Just News Bd এর একটি প্রতিবেদন এবং ব্রিফিংয়ের একটি ভিডিও সংযুক্ত করেন।
মূলত, সম্প্রতি দেশের কতিপয় গণমাধ্যমসহ ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় জন কংগ্রেসম্যান কর্তৃক একটি চিঠি দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পাঠানো একটি চিঠি ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছে কতিপয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। ২৫ মে প্রকাশিত উক্ত চিঠিটি আসল বলে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি’র (PA-10) ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর জে ওস্ট্রিচ রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যান বব গুডও তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া, কংগ্রেসম্যানের চিঠি সম্পর্কে হোয়াইট হাউস অবগত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)’র স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি।
সুতরাং, বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে দেশটির ছয় জন কংগ্রেসম্যানের লেখা আলোচিত চিঠিটি ভুয়া শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement from Jay Ostrich
- Mushfiqul Fazal Ansarey: Facebook Post
- Rumor Scanner’s own analysis