শুক্রবার, সেপ্টেম্বর 22, 2023
spot_img

পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশটি আদালতের দেওয়া নয়

সম্প্রতি ‘পহেলা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বন্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছে আদালত’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে  প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot from crowdtangle.

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আদালতের আইনি নোটিশ দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আইনি নোটিশটি দিয়েছেন মো. মাহমুদুল হাসান নামে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।

আইনি নোটিশ কি? কে দেয়?

আইনি নোটিশ নিয়ে বিশ্লেষণে দেখা যায়, আইনি নোটিশ বা উকিল নোটিশ হচ্ছে যেকোনো মামলার কার্যক্রম শুরুর আগে প্রতিপক্ষকে দেওয়া নোটিশ। কারো বিরুদ্ধে মামলা করার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এ নোটিশ দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব না এলে তখন মামলা দায়ের করতে হয়। 

আইনি নোটিশ নিয়ে আরও জানা যায়, হাইকোর্টে মামলা পরিচালনার জন্য সাধারণত হাইকোর্টের নিবন্ধনযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ প্রেরণের দায়িত্ব প্রদান করতে হয়। বিপরীতে জেলা জজ আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য জজ আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এমন আইনজীবীকে দিয়ে উকিল নোটিশ দিতে হয়। তবে এই উকিল নোটিশের সঙ্গে আদালতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

আইনি নোটিশ নিয়ে জানতে আরও পড়ুন:

হঠাৎ উকিল নোটিশ পেলে 

উকিল বা আইনি নোটিশ নিয়ে বিশ্লেষণে বুঝা যায়, এই নোটিশ আইনজীবী কর্তৃক পাঠাতে হয় এবং এর সঙ্গে আদালতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে গত ৯ এপ্রিল ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Bangla Tribune

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত ৯ এপ্রিল রেজিস্ট্রি ডাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়৷ এই নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

Screenshot: Bangla Tribune

একই বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন; ভোরের কাগজ, কালেরকণ্ঠ, আরটিভি

এসব প্রতিবেদন থেকেও বাংলাদেশের ট্রিবিউনের অনুরূপ তথ্য জানা যায়। এছাড়া এ প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত উক্ত আইনি নোটিশের বিষয়ে পরবর্তী কোনো হালনাগাদ তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ 

উল্লেখ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ উদযাপনের জন্য গত ১১ এপ্রিল একটি নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

Image: Department of Secondary and Higher Education Notice

নির্দেশনায় বলা হয়,

  • নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে।
  • সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে। ইউনেস্কো কর্তৃক মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ‘Intangible Cultural Heritage’ এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতে হবে। সকালে আবশ্যিকভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে র‌্যালি করতে হবে।
  • নতুন কারিকুলামের সাথে সমন্বয় করে ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক ‘বৈচিত্র্যে ভরা বৈশাখ’ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে এবং বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা এ কার্যক্রম সুবিধাজনক সময়ে মূল্যায়ন করবেন।

তবে পরবর্তীতে আজ ১৩ এপ্রিল আগের নির্দেশনাটি বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ উদযাপনের নতুন আরেকটি নির্দেশনা জারি করে।

Image: Department of Secondary and Higher Education New Notice 

এ নির্দেশনায় বলা হয়, 

  • নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন অনুষ্ঠান জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। অনু্ষ্ঠানে পবিত্র রমজানের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করে হবে।
  • সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে ও ধর্মীয় অনূভুতি বজায় রেখে যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে।

পাশাপাশি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকেও একই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

Image: Department of Secondary and Higher Education New Notice

পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পহেলা বৈশাখ পালন সংক্রান্ত একটি নির্দেশনায় জাতীয় সংগীত, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে নববর্ষ পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Image: Department of Madrasah Education Notice

মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আদালতের আইনি নোটিশ দাবিতে তথ্য প্রচারের ফলে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি

পহেলা বৈশাখ বন্ধে আইনজীবী প্রদত্ত নোটিশকে 

আদালতের আইনি নোটিশ দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ফলে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। 

যেমন, সৈয়দ ফাহিম নামে একজন লিখেছেন, ‘এর কারণ হিসেবে কি বলছে আদালত?’

সাদিকুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘খুবই ভাল। কিন্তু হঠাৎ এই রকম সিদ্ধান্তের কারণ কি?’

রাকিব হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘আদালতও মৌলবাদীদের পক্ষে চলে গেলো।’

তীর্থ নামে একজন লিখেছেন, ‘সম্ভবত রমজানের কারণে।’

ফারহানা ইতি নামে একজন লিখেছেন, ‘ঠিক আছে। রোজা, রমজানের দিনে এসব না করাই ভালো।’

Screenshot Collage: Rumor Scanner

মূলত, গত ৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনকে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে একটি আইনি নোটিশ পাঠান৷ এই আইনজীবীর এই নোটিশটিকেই পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদালত কর্তৃক আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়।

সুতরাং, পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে এক আইনজীবীর পাঠানো আইনি নোটিশকে আদালতের পাঠানো আইনি নোটিশ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img