সম্প্রতি ‘দুঃসংবাদ! পুরো দেশ কাঁদিয়ে মারা গেলেন জিহ্বা কাটা বক্তা শরিফুল ইসলাম, কেঁদে কেঁদে যা বললেন মিজানুর রহমান‘ শীর্ষক একটি তথ্য কিছু ব্লগ সাইট ও ভূঁইফোড় পোর্টালে প্রকাশের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দুর্বৃত্তের হামলায় আহত ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলাম মারা যাননি বরং তিনি হাসপাতাল থেকে সফল সার্জারী পরবর্তী শেষে বর্তমানে নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
তথ্যের সত্যতা যাচাই
ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলামের মারা যাওয়ার দাবিতে প্রচার করা কয়েকটি পোর্টাল ও ব্লগের লিংকে গিয়ে দেখা যায় সেগুলোতে কোনোটিতে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেওয়া নেই। আবার কোনোটিতে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকলেও বিস্তারিত অংশে শরীফুল ইসলামের মৃত্যু সম্পর্কিত কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।
viralnew101.com নামের ব্লগ সাইটটির সংবাদের বিস্তারিত অংশে শিরোনামের তথ্যটি হুবহু লেখা ব্যতীত আর কিছু উল্লেখ নেই।

অন্যদিকে, এই বিষয়ে viraltopics24.com নামের ব্লগ সাইটে প্রকাশিত সংবাদটির বিস্তারিত অংশেও বক্তা শরীফুল ইসলামের মারা যাওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই।

এছাড়া, শরীফুল ইসলামের মৃত্যুর তথ্য সম্পর্কিত সংবাদের শিরোনাম ‘কেঁদে কেঁদে যা বললেন মিজানুর রহমান আজহারী’ শীর্ষক তথ্য উল্লেখ থাকলেও প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে আজহারীর কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের শুরুতে মুফতি শরীফুল ইসলামের মারা যাওয়ার দাবির সত্যতা যাচাইয়ে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

আজ ২৬ মার্চ নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে মুফতি শরীফুল ইসলাম নূরী জানান,
“#মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিত ঢাকা ইবনে সিনা হাসপাতালে সফল সার্জারীর পরবর্তী চিকিৎসা নিয়ে এইমাত্র নিজ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসলাম।(আলহামদুলিল্লাহ)#এখনো তরল খাবার যেমন-সুপ,জুস,ডাবের পানি খাচ্ছি। আরো সপ্তাখানেক এমন খাবারই চলবে। পরবর্তী সপ্তাহ থেকে আস্তে আস্তে নরম খাবার ও পরে স্বাভাবিক খাবারের দিকে যাবো। আলহামদুলিল্লাহ, রোজা পালন করছি,যদিও চিকিৎসক রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। #ক্ষত শুকাতে আরো অনেক সময় লাগবে এবং স্বাভাবিক কথা বলতে আরো ৯০ দিনের বেশি সময় লাগবে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন।”

এছাড়া, গতকাল ২৫ মার্চ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান,
“আলহামদুলিল্লাহ, আজ রাত ৮ টায় দয়াগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতালে আমার সফল সার্জারী হয়েছে। আগামীকাল বিকালে গ্রামে ফিরবো, ইনশাআল্লাহ।”
ছবির সত্যতা যাচাই
মুফতি শরীফুল ইসলামের লাশের কফিন বহরের দৃশ্য দাবিতে ভূঁইফোড় পোর্টাল ও ব্লগ সাইটের সংবাদে ব্যবহৃত ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Smart Panjabi Shop নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ০৫ মার্চ মুফতি মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী বাবার লাশ বহনের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত পোস্টে(আর্কাইভ) আসল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছবিতে মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর সাথে লাশের খাটিয়া কাঁধে নেওয়া ব্যক্তির ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় মুছে দিয়ে ওই জায়গায় মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান সিদ্দিক এর ছবি বসানো হয়েছে।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত এবং ছবি পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট যে, ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলাম মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
মূলত, গত ০৪ মার্চ রাতে মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মাওলানা শরীফুল ইসলাম নামের এক ইসলামি বক্তার ওপর হামলা চালিয়ে ছুরি দিয়ে তার জিহ্বা কেটে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আহত ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলাম মারা গেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, মুফতি শরীফুল ইসলাম সর্বশেষ ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে সফল সার্জারী পরবর্তী চিকিৎসা শেষে বর্তমানে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। অর্থাৎ তিনি বেঁচে আছেন।
প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ইসলামি বক্তা মুফতি শরীফুল ইসলামের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৭ মার্চ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এর আগে গত ০৪ মার্চ আখাউড়ায়এক মাহফিলে শিয়া সম্প্রদায় নিয়ে বিরূপ বক্তব্য দিয়েছিলেন বক্তা শরীফুল ইসলাম। ওই মাহফিল থেকে ফেরার পথে তার ওপর হামলা হয়।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলামের জিহ্বা কাটার ঘটনায় মাওলানা তাহেরির গ্রেফতার হওয়ার তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় উক্ত বিষয়টিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত ইসলামি বক্তা মুফতি শরীফুল ইসলামের মারা গিয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Mufti Shariful Islam Nuree: Facebook Account
- Bdnews24: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামি বক্তার ওপর হামলা: চারজন গ্রেপ্তার
- Rumor Scanner Own Analysis