ভারতের উইমেন প্রিমিয়ার লীগের ধারাভাষ্যকার নিষিদ্ধ হয়নি

সম্প্রতি “ভারতের মহিলা ক্রিকেটের প্রিমিয়ার লীগ বা Women Premier League (WPL) এ একজন নারী খেলোয়াড় সাধারণ ক্যাচ মিস করার পর ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে একজন ধারাভাষ্যকার ‘Women HaHaHa’ বলায় ধারাভাষ্য কক্ষে থাকা দুইজন ধারাভাষ্যকারকে WPL থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের উইমেন প্রিমিয়ার লীগের ধারাভাষ্যকারদের নারী খেলোয়াড়কে ‘women hahaha’ বলে বিদ্রুপ করায় ২ জন ধারাভাষ্যকার নিষিদ্ধের দাবিটি সঠিক নয় বরং উক্ত দাবিটি প্রথমে কৌতুক হিসেবে টুইটারে শেয়ার করা হয়েছিলো যা পরবর্তীতে সত্য ভেবে অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছেন। 

অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত দাবিটি গত ১০ মার্চ একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট (আর্কাইভ) থেকে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে সর্বপ্রথম প্রচার করা হয়। 

screenshot: Twitter

টুইটার অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি একটি স্যাটায়ারধর্মী টুইটার অ্যাকাউন্ট। অ্যাকাউন্টের বায়োতে ‘মিম, ক্রিকেট, প্যারোডি ইত্যাদি শব্দ লেখা রয়েছে। তাছাড়া ভাইরাল ব্যানারের বাম পাশে ছোটকরে ‘স্যাটায়ার’ শব্দ লক্ষ্য করা যায়। এতে বোঝা যায় একটি স্যাটায়ারধর্মী টুইটার অ্যাকাউন্টটি থেকে মজার ছলে উক্ত দাবিটির সূত্রপাত ঘটে।

Image Source: H on Twitter

এছাড়া, উক্ত টুইটের কমেন্টবক্স পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে অনেকেই খবরটির সত্যতা জানতে চেয়ে মন্তব্য করেছেন। সেগুলোর রিপ্লাইয়ে পোস্টদাতা নিজেই জানান, এটা একটা স্যাটায়ার পোস্ট।

screenshot: Twitter 

এছাড়াও, ভারতের উইমেন প্রিমিয়ার লীগের খেলোয়াড়দের বিদ্রুপ করে করা মন্তব্যের কারণে ধারাভাষ্যকারদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে  মর্মে কোন সংবাদ ভারতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আলোচিত দাবির সাথে প্রচারিত ধারাভাষ্যকারদের ছবিটির সূত্র খুঁজার চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ড এর অনলাইন সংস্করণে ২০১৯ সালের ০২ মে তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মূল ছবিটি পাওয়া যায়। 

screenshot: Deccan Herald

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ওই ৩ জন ব্যক্তির নাম সুজিত সোমসুন্দর, বিজয় ভরদ্বাজ (দাঁড়িয়ে) এবং শ্রীনিবাস মূর্তি।  ছবির ৩ ব্যক্তি ২০১৯ সালে কন্নড় ভাষায় আইপিএল টুর্নামেন্টের ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে, ভারতীয় স্পোর্টস পোর্টাল ‘mykhel’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ভারতীয় উইমেন প্রিমিয়ার লীগ টুর্নামেন্টের ধারাভাষ্যকারদের নামের তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উক্ত তিন ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়নি।

Screenshot: mykhel

মূলত, গত ১০ই মার্চ ভারতীয় স্যাটায়ারধর্মী একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে মজার ছলে একটি ডিজিটাল ব্যানার পোস্ট করা হয়। যেখানে বলা হয়, ভারতের উইমেন প্রিমিয়ার লীগে একজন নারী খেলোয়াড় ক্যাচ মিস করার কারণে ধারাভাষ্যকার তাকে ‘Woman HaHaHa’’ বলে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেন এবং নিষিদ্ধ হন। পরবর্তীতে স্যাটায়ারধর্মী উক্ত টুইটার অ্যাকাউন্টের পোস্টই অনূদিত হয়ে বাস্তব দাবিতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে, বিশ্বস্ত কোনো সূত্র উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া উক্ত দাবির সাথে যে তিনজন ধারাভাষ্যকারদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তারা ২০২৩ উইমেন প্রিমিয়ার লীগের দায়িত্বে নেই এবং প্রচারিত ছবিটি ২০১৯ আইপিএলে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় ধারণকৃত।

প্রসঙ্গত, নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে ভারতে গত ৪ মার্চ প্রথমবারের মত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসর উইমেন প্রিমিয়ার লীগ (ডব্লিউপিএল) টুর্নামেন্ট শুরু হয়।

সুতরাং, উইমেন প্রিমিয়ার লীগে খেলোয়াড়কে ‘Women HaHaHa’ বলে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যের কারণে ধারাভাষ্যকারদের নিষিদ্ধ হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img