সম্প্রতি, ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ট্রাম্প সহায়তা বন্ধ করায় এইডস – এ লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ।

উক্ত দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে ট্রাম্প সহায়তা বন্ধ করায় এইডসে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে জানিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি জাতিসংঘ বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্তের কারণে লাখ লাখ মানুষ এইডস রোগে মারা যেতে পারেন বলে জাতিসংঘের এইডস রোগ সংক্রান্ত কর্মসূচির প্রধান মন্তব্য করলেও তাতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আনেননি। আফ্রিকার কথা উঠে এসেছে এএফপিকে দেওয়া তার এই সাক্ষাৎকারে। তাছাড়া, বাংলাদেশে লাখ লাখ রোগী এইডসে আক্রান্তও নেই যে এত সংখ্যক মানুষ মারা যাবে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪ এর ওয়েবসাইটে জাতিসংঘের এইডস রোগ সংক্রান্ত কর্মসূচির প্রধান উইনি বায়ানিমার এ সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারের সংবাদটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। এএফপিকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অনেক দেশের জন্য এটি (ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিত) একটু বাড়াবাড়ি পদক্ষেপ হয়েছে। এইডস ত্রাণ তহবিলের একটি বড় অংশ দিত যুক্তরাষ্ট্র। যদি তা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে।’
একই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, এইডস ত্রাণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জরুরি পরিকল্পনা আওতাধীন সমস্ত সহায়তা ৯০ দিনের জন্য বন্ধ করেছেন ট্রাম্প। যদিও তার প্রশাসন পরে চিকিৎসার সহায়তা চালু রাখার ঘোষণা দেন। কিন্তু আফ্রিকান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা আর সহায়তা পাচ্ছেন না।
এই প্রতিবেদনে এবং উইনি বায়ানিমার এ সংক্রান্ত বক্তব্যের কোনো অংশে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসেনি৷
অর্থাৎ, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ট্রাম্প সহায়তা বন্ধ করায় এইডসে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হওয়া সংক্রান্ত উইনি বায়ানিমার মন্তব্যের সাথে বাংলাদেশকে জড়ানো হয়েছে।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর গত বছরের ০১ ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩৮ জন নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। গেল বছর এইডসে মারা গেছেন ১৯৫ জন। বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি (এইডসের ভাইরাস) পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এর মধ্যে এবার এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ।
প্রথম আলো বলছে, ২০২৩ সালে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৬৬। ২০২৪ সালে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এ সংখ্যা ছিল ১৯৫।
অর্থাৎ, বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত রোগী লাখ লাখ নয়। তাই এইডসে এত সংখ্যক মানুষে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকাও অবান্তর।
সুতরাং, বাংলাদেশে ট্রাম্প সহায়তা বন্ধ করায় এইডসে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে জানিয়েছে জাতিসংঘ শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।