সম্প্রতি, কারাগারেই গর্ভবতী হচ্ছেন নারী বন্দীরা!- শীর্ষক শিরোনামে একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, ঘটনাটি বাংলাদেশের।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কারাগারে নারী বন্দিদের গর্ভবতী হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের।
অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে (ঢাকা প্রকাশ, নয়াশতাব্দী, আমার সংবাদ) “কারাগারেই গর্ভবতী হচ্ছেন নারী বন্দীরা !” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সংবাদ গুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ করা না হলেও প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে একাধিক ফেসবুক পেজ যথাযথভাবে যাচাই না করে অথবা অধিক রিচ পাওয়ার আশায় বিষয়টির বিস্তারিত উল্লেখ না করে গণমাধ্যমের শিরোনাম কপি পেস্ট করে ফেসবুকে প্রচার করেছে। এছাড়া, ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করেও প্রচার করা হয়েছে। ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও স্থানের নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় বিষয়টি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের নেটিজেনরা বিষয়টি সঠিকভাবে না জেনেই ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করেছেন।
এবিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স বিশ্লেষণ করে নেটিজেনদের ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি এর ওয়েবসাইটে গত ১১ ফেব্রুয়ারি “পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে নারী বন্দিদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ঠেকাতে যে সুপারিশ করা হয়েছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কারাগারগুলোতে থাকাকালীন নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন এবং কারাগারেই তাদের সন্তানরা জন্ম নিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যগুলোতে কারাগারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে ‘অ্যামিকাস কিউরে’ বা আদালত বন্ধু হিসাবে নিযুক্ত আইনজীবী তাপস ভঞ্জ’র। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টকে এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।
এছাড়া, একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোও। প্রতিবেদন দেখুন- হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে এবং এবিপি নিউজ।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সম্প্রতি বাংলাদেশে এমন কোনো ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, কারাগারে নারী বন্দিদের গর্ভবতী হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়।
মূলত, সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কারাগারগুলোতে থাকাকালীন নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন এবং কারাগারেই তাদের সন্তানরা জন্ম নিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যগুলোতে কারাগারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে ‘অ্যামিকাস কিউরে’ বা আদালত বন্ধু হিসাবে নিযুক্ত আইনজীবী তাপস ভঞ্জ’র। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টকে এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছেন ওই আইনজীবী। এরইমধ্যে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমের সংবাদের শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ না করে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে একাধিক ফেসবুক পেজেও বিষয়টি স্থানের নাম উল্লেখ না করে প্রচার করা হয়। এতে বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা ভেবে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
সুতরাং, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে নারী বন্দিদের গর্ভবতী হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- BBC- পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে নারী বন্দিদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ঠেকাতে যে সুপারিশ করা হয়েছে
- Hindustan Times- Women getting pregnant in jail, bar entry of male staffers: Calcutta HC told
- The Indian Express- Women prisoners getting pregnant, 196 babies in Bengal prisons, HC told
- The India Today- Inmates getting pregnant in Bengal jails, 196 babies born: Calcutta High Court told
- Abp News- Are Women Getting Pregnant In Indian Prisons? What Last Five-Year Data Shows
- Rumor Scanner’s Own Analysis