সম্প্রতি “সকল কলেজের টেস্ট পরীক্ষার খাতা 6 মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। বোর্ড থেকে এই সকল শিক্ষার্থীর ফলাফল বোর্ডের লোক পর্যবেক্ষণ করবে। যদি কোন শিক্ষার্থী কোনো সাবজেক্টে ফেইল করে তাহলে সে HSC পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে পারবে না।…আর এই কার্যক্রমটি এই বছর থেকে চালু করা হয়েছে।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা ৬ মাস সংরক্ষণ করার কার্যক্রমটি এ বছর থেকে চালুর ব্যাপারটি সঠিক নয় বরং নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা যাতে মূল পরীক্ষায় বসতে না পারে সেজন্য এই কার্যক্রমটি দীর্ঘদিন থেকেই চলে আসছে।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১৩
অক্টোবর “এসএসসি-২০২০ নির্বাচনি পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা প্রসঙ্গে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

এই বিজ্ঞপ্তিটি থেকে জানা যায়, “আসন্ন এসএসসি নির্বাচনি পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি না দেয়া এবং নির্বাচনি পরীক্ষার উত্তরপত্র উত্তীর্ণ ও অনুত্তীর্ণ আলাদা করে ০৬ (ছয়) মাস সংরক্ষণ করতে হবে।”
এছাড়া বিজ্ঞপ্তিটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-১০ (মাধ্যমিক-১) এর ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল দেওয়া একটি ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া আরেকটি মোট দুইটি পৃথক নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-১০ (মাধ্যমিক-১) এর ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল দেওয়া নির্দেশনাটি থেকে জানা যায়, “মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পূর্বে নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠানের নিয়ম রয়েছে। উক্ত নির্বাচনী পরীক্ষার সকল বিষয়ে উত্তীর্ণরাই পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে মর্মে বিধান রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী (Test) পরীক্ষায় এক/একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদেরকেও ঐরূপ প্রত্যয়নপত্র প্রদানপূর্বক চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনী (Test) পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদেরকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণসহ পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী (Test) পরীক্ষার খাতাসমূহ সংরক্ষণ করা এবং মাঝে মাঝে তা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন পরামর্শ প্রদান করেছেন।”

অপরদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র ২০১৮ ৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া নির্দেশনাটি থেকে জানা যায়, নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ছাত্র/ছাত্রী যাতে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না পান সেজনা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নির্বাচনী পরীক্ষার তাসমূহ পাবলিক পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে এবং মাঝে মাঝে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ দুর্নীতি দমন কমিশনের স্মারক নং- দুদক / প্রতিরোধ / কার্যক্রম/০১/১০ (অংশ)২৭১৪ (৫), তারিখ: ২২/০১/২০১৭ মূলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
পরবর্তীতে নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা ৬ মাস সংরক্ষণ কার্যক্রম এ বছর থেকে শুরু হওয়ার দাবিটির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
এর মধ্যে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধবচন্দ্র রুদ্র এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, এটা দীর্ঘদিনের পুরানো নোটিশ যে, টেস্ট পরীক্ষার খাতা অফিসে সংরক্ষণ করতে হয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। এছাড়া আমাদের যে ফাইনাল পরীক্ষা হয়, সেটার খাতাও ৬ মাস সংরক্ষণ করতে হয়।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, এটা আমিও ফেসবুকে দেখছি। কিন্তু আমার হাতে এমন চিঠি আসেনি এখনো। কিন্তু আমাদের যে মূল পরীক্ষা হয় এসএসসি-এইচএসসি তার মূল খাতা আমরা ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখি।
অপরদিকে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Sarabangla.net এ ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর “চার বিষয়ে ফেল, ওরা অংশ নিচ্ছে এসএসসি পরীক্ষায়!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘এসএসসি ও এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি না দেওয়া এবং নির্বাচনী পরীক্ষার উত্তরপত্র ৬ মাস সংরক্ষণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

অর্থাৎ, নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা সংরক্ষণের বিষয়টি নতুন কোনো নির্দেশনা নয়৷ বরং নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ছাত্র/ছাত্রী যাতে পাবলিক পরীক্ষায় যাতে অংশগ্রহণের সুযোগ না পায় সেজন্য দুদক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এটি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে।
মূলত, নির্বাচনী (Test) পরীক্ষায় এক/একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা যাতে মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-১০ (মাধ্যমিক-১) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পূর্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা সংরক্ষণ করা ও মাঝে মাঝে তা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)পরামর্শে নির্দেশনা দেয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া দুদকের একটি বিজ্ঞপ্তিতেও থেকেও এমন নির্দেশনা সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়া দেশের একাধিক শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেও রিউমর স্ক্যানার নিশ্চিত করেছে, এই নির্দেশনাটি নতুন নয়। বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
সুতরাং, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা ৬ মাস সংরক্ষণ করার কার্যক্রমটি এ বছর থেকে চালুর ব্যাপারটি সঠিক নয়; এটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Cumilla Education Board: এসএসসি-২০২০ নির্বাচনি পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা প্রসঙ্গে
- Conversation with Jessore Education Board Examination Controller
- Conversation with Barisal Education Board Examination Controller
- Sarabangla.net: চার বিষয়ে ফেল, ওরা অংশ নিচ্ছে এসএসসি পরীক্ষায়!