সম্প্রতি “এক পায়ে ১০ সেকেন্ড না দাঁড়াতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য গণমাধ্যমের বরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক পায়ে ১০ সেকেন্ড না দাঁড়াতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি: গবেষণা (আর্কাইভ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ সেখানে বলা হয়, “গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১০ সেকেন্ডের জন্য এক পায়ে দাঁড়াতে না পারা মৃত্যুঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত। এক হাজার ৭০২ জনের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।”

একই তথ্যের শিরোনামে অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন – চ্যানেল ২৪ (আর্কাইভ)।
একইদিন ফেসবুকে অনলাইন সংবাদমাধ্যম priyo.com এর পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টেও (আর্কাইভ) একই দাবি করে লেখা হয়, “এক পায়ে ১০ সেকেন্ড না দাঁড়াতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি: গবেষণা।”

একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক পায়ে ১০ সেকেন্ড না দাঁড়াতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি বেশির তথ্যটি সকল বয়সীদের ক্ষেত্রে নয় বরং ৫১ থেকে ৭৫ বছর তথা নির্দিষ্ট বয়সের মানুষদের এই ঝুঁকি বেশি বিষয়ক ফল এসেছে গবেষণায়।
কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট healthline এ চলতি বছরের ২১ জুন Can You Stand on One Leg for 10 Seconds? What that Tells You About Your Overall Health শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাতে বলা হয়, “১০ সেকেন্ডের জন্য এক পায়ে দাঁড়ানোর অক্ষমতা আগামী দশকের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।”

পরবর্তীতে healthline এর প্রতিবেদনের সূত্র ধরে মূল গবেষণা প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত পাঁচটি দেশের একদল গবেষকের করা উক্ত গবেষণাটি ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৫১ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ১৭০২ জনের উপর করা হয়।

অংশগ্রহণকারীদের একটি সমতল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। এক পায়ে ১০ সেকেন্ড দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাদের স্থির ভারসাম্য পরিমাপ করা হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায়, ৫১-৫৫ বছর বয়সের মধ্যে ৪.৭ শতাংশ মানুষ কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেনি। ৭১-৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার ৫০ শতাংশ। মধ্যবয়সী ও বয়স্ক অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম ও সর্বজনীন মৃত্যুর ঝুঁকি ৮৪ শতাংশ বেশি।
অর্থাৎ, ৫১ থেকে ৭৫ বছর তথা নির্দিষ্ট বয়সের মানুষদের উপর করা এক গবেষণায় এক পায়ে ১০ সেকেন্ড না দাঁড়াতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি বিষয়ক ফল এসেছে। এই ফলাফল কোনোভাবেই সব বয়সী মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়।
বিভ্রান্তির নমুনা
উক্ত বিষয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম ও ফেসবুকের পোস্টগুলোতে গবেষণায় কোন বয়সীদের তথ্য নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় সব বয়সীদের ক্ষেত্রেই এই গবেষণার ফলাফল এসেছে ধরে নিয়ে অসংখ্য কমেন্ট লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। এক্ষেত্রে তাই স্পষ্টভাবেই বিভ্রান্ত করা হয়েছে মানুষকে।

মূলত, ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৫১ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ১৭০২ জনের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, উক্ত নির্দিষ্ট বয়সের মানুষেরা এক পায়ে ১০ সেকেন্ড না দাঁড়াতে পারলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। উক্ত বিষয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম ও ফেসবুকের পোস্টগুলোতে গবেষণায় কোন বয়সীদের তথ্য নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় সব বয়সীদের ক্ষেত্রেই এই গবেষণার ফলাফল এসেছে ধরে নিয়ে পোস্টগুলোতে অসংখ্য কমেন্ট লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। এক্ষেত্রে তাই স্পষ্টভাবেই বিভ্রান্ত করা হয়েছে মানুষকে।
উল্লেখ্য, এই গবোষণায় অংশগ্রহণকারী সবাই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ ব্রাজিলিয়ান। নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে পাওয়া এই ফলাফলগুলো অন্যান্য জাতি এবং গোষ্ঠীর জন্য আরও ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে, এমনটাই উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। এছাড়াও, পড়ে আঘাত পাওয়ার ঘটনা, খাদ্যাভ্যাস, ওষুধের ব্যবহার, ধূমপান- অর্থাৎ যা যা ভারসাম্যের ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তার তথ্যও এই গবেষণায় ছিল না। যদিও যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে তা প্রয়োজনীয় বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পারায় আকস্মিক পড়ার কারণে মারা যায়। যার মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি নিম্ন/মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
সুতরাং, এক পায়ে ১০ সেকেন্ড না দাঁড়াতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি বেশির দাবিটি বিভ্রান্তিকর।