অধিক তাপমাত্রায় গাড়ির জ্বালানি নিয়ে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের নামে ভুয়া সতর্কবার্তা প্রচার

সম্প্রতি,“ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন অধিক তাপমাত্রায় গাড়িতে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি তেল ভরতে নিষেধ করেছে কারণ এতে জ্বালানি ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ হতে পারে” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুক পোস্টগুলোতে বলা হচ্ছেঃ

সতর্কবার্তা

ইন্ডিয়ান অয়েল একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে আগামী দিনে তাপমাত্রা বাড়তে চলেছে, তাই সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত আপনার গাড়িতে জ্বালানি ভরবেন না। এটি জ্বালানী ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।  আপনার গাড়ির অর্ধেক জ্বালানী ট্যাঙ্ক পূরণ করে বাতাসের জন্য জায়গা রাখুন। সর্বোচ্চ পেট্রোল ভরার কারণে চলতি সপ্তাহে ৫টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

দিনে একবার পেট্রোল ট্যাঙ্ক খুলুন এবং ভিতরে তৈরি গ্যাসটি বেরিয়ে আসতে দিন।

আপনার পরিবারের সদস্যদের এবং অন্য সবাইকে এই বার্তাটি পাঠান, যাতে লোকেরা এই দুর্ঘটনা এড়াতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিক তাপমাত্রায় গাড়িতে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি ভরলে জ্বালানী ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে উল্লেখ করে কোনো বিবৃতি দেয়নি ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন বরং কোন রকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের নামে প্রচারিত হয়ে আসছে। 

অনুসন্ধান

ইন্ডিয়ান  ওয়েল করপোরেশন  উক্ত  বিষয়ে কোন বিবৃতি দিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ইন্ডিয়ান  অয়েল কর্পোরেশনের করা একটি টুইট বার্তা খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

২০১৯ সালের ০৩ জুন প্রতিষ্ঠানটি এক  টুইট বার্তায় জানায়, “শীত-গ্রীষ্ম নির্বিশেষে প্রস্তুতকারকের দ্বারা নির্দিষ্ট সীমা (সর্বোচ্চ) পর্যন্ত যানবাহনে জ্বালানি পূরণ করা সম্পূর্ণ নিরাপদ।”

Screenshot from Indian Oil Corporation

তাছাড়া, একই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে করা একটি পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম টিম।

Screenshot from Indian Oil Corporation

এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের নামে উক্ত দাবিগুলো নতুন করে প্রচারিত হলে গত ১২ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে  তাদের ফেসবুক পেইজে আরো একটি পোস্ট করা হয়।

Screenshot from Indian Oil Corporation

অর্থাৎ, প্রায় তিন বছর আগের টুইট, ২০২২ এবং ২০২৩ সালের করা এই ফেসবুক পোস্ট প্রমাণ করে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের নাম দিয়ে এই দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।

উক্ত দাবিগুলোর বিপরীতে ইন্ডিয়ান অয়েল  করপোরেশন প্রতিবারই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছে যে, “অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানীগুলো গাড়ির নিরাপত্তা অন্যান্য আনুসঙ্গিক প্রতিটি দিক বিবেচনা করেই গাড়ি ডিজাইন করেন। আর পেট্রোল/ডিজেল চালিত  গাড়িতে জ্বালানির ট্যাঙ্ক তৈরির ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটি প্রযোজ্য। তাই, শীত-গ্রীষ্ম নির্বিশেষে সকল সময়েই গাড়ির প্রস্তুতকারকের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী জ্বালানি ট্যাঙ্কে পূর্ণ মাত্রায় তেল ভরা সম্পূর্ণ নিরাপদ।

উল্লেখ্য যে, একই দাবি পূর্বেও পাকিস্তান স্টেট অয়েল (PSO) এর নামে প্রচারিত হলে ১৯ মে ২০১৮ তারিখে পাকিস্তান স্টেট অয়েল তাদের ফেসবুক পোস্টে জানায় যে তার পূর্ণ ক্ষমতায় জ্বালানি ট্যাঙ্ক ভর্তি করা গাড়ি বা এর যাত্রীদের জন্য কোনও হুমকির কারণ নয়।

পাকিস্তান স্টেট অয়েল আরো জানায়, যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পেট্রোল স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠে তা পাকিস্তানের গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার থেকেও অনেক বেশি। তাই আপনার ফুয়েল ট্যাঙ্ককে তার পূর্ণ ক্ষমতায় পূরণ করলে তা গাড়ি কিংবা যাত্রী কারো জন্যই কোনো ধরনের হুমকির কারণ হয় না এবং গাড়ি চালানোর জন্য এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং উপকারী বলেও মনে করা হয়।  

Screenshot from Pakistan State Oil

মূলত, অধিক তাপমাত্রায় গাড়িতে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানী পূর্ণ করলে জ্বালানি ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটার দাবিটি কোনো রকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বহুকাল ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের দুইটি বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানীর নাম দিয়ে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে উভয় দেশের কোম্পানীগুলোই তাদের নামে প্রচারিত উক্ত দাবিগুলোকে মিথ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। 

সুতরাং, অধিক তাপমাত্রায় গাড়িতে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি ট্যাঙ্ক পূর্ণ করলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন সতর্কবার্তা দিয়েছে দাবি করে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img