পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের সংঘর্ষে পুলিশ আহতের দাবিতে মিথ্যা তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি, পুলিশ বিএনপি জামায়াতের ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশকে পিটিয়ে মাথা ফাটালো– শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলা হয়েছে। 

পুলিশ, বিএনপি

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি এবং কোনো পুলিশ সদস্যও আহত হননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিও ক্লিপ ও একটি সংবাদ প্রতিবেদন এবং কয়েকটি ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও।

ভিডিও যাচাই- ১

অনুসন্ধান করে এই ভিডিও সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একজন সংবাদ উপস্থাপককে সংবাদ উপস্থাপন করতে দেখা যায়। উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ ডিসেম্বর “তেজগাঁওয়ে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিলো দুবৃর্ত্তরা, ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ ওই ট্রেনের চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। 

তখন ঘটনাস্থল থেকে লাইভ করেন যমুনা টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক। সেই লাইভের ভিডিও এটি। 

অর্থাৎ, পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার কোনো ভিডিও নয় বরং রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুনের ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন এটি। 

পরবর্তীতে, দাবিটি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করতে গণমাধ্যম ও  সামাজিক মাধ্যমের কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিগত কয়েকবছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকরা দফায় দফায় বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী পক্ষসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলছে। এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তিকে জড়িয়ে নানা সময় নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘পুলিশ বিএনপি জামায়াতের ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশকে পিটিয়ে মাথা ফাটালো’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি নয়। প্রকৃতপক্ষে সম্প্রতি পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি এবংকি কোনো পুলিশ সদস্যও আহত হোননি। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, পুলিশ, বিএনপি এবং জামায়াতের সংঘর্ষে পুলিশকে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img