ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুনের বহিস্কার এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মিথ্যা

সম্প্রতি ‘বহিস্কৃত হলেন ডিবি প্রধান হারুন, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বহিস্কৃত হননি এবং তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টিও সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। 

গত ০৩ জুন Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ০৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের পুরোনো কয়েকটি ছবি দেখা যায়।

১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটির শুরুতেই ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের পুরোনো একটি ভিডিও সংযুক্ত করা হয়। এরপর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বহিস্কার হলেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ। কতকাল সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এক খবর জানানো হয়। ইতোমধ্যেই ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের ওপর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি ও ভিডিও যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। 

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে একুশে টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ‘ছেলের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাদলেন এসপি হারুন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: ETV YouTube

এই ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির শুরুর অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জের এসপি থাকার সময়ে হারুন অর রশীদের একটি পুরোনো বক্তব্যের ভিডিওকে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। 

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ০২ জুন ‘১৩ দিনের ছুটিতে যাচ্ছেন ডিবিপ্রধান হারুন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jugantor

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিজের এবং স্ত্রীর চিকিৎসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন।  ০৩ জুন থেকে ১৩ দিনের ছুটি পেয়েছেন তিনি।

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির অনলাইন সংস্করণে আজ(০৪ জুন) ‘সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ গিয়ে ফিরবেন না, এটা গুজব: হারুন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Somoy TV

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া ভিডিওতে বলা হচ্ছে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ ছাড়বেন এবং আর ফিরবেন না।

বিষয়টি নিয়ে রোববার (৪ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলেন হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ‘শুধু আমাকে নিয়ে নয়, কয়েকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে কে বা কারা দেশের বাইরে থেকে ভিডিও বানাচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তারা অনেকেই দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরবেন না, এটা সম্পূর্ণ গুজব।’

ডিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশ যাওয়ার ছুটি পেতে অনেক দিন লাগে। অনেক স্তর পার হতে হয়। আমার কাছে মনে হয়, যারা এসব করছে তারা ভিউ বাড়ানোর জন্য এমন করছে। তারা টাকা কামানোর জন্য করছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা যারা সরকারি চাকরি করি আমাদেরও পরিবার আছে, আমাদেরও বিশেষ প্রয়োজন আছে। আমাদেরও ছুটির প্রয়োজন হয়। কেউ যদি মনে করেন যে এ ধরনের ভিডিও বানিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেবে, তাহলে তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করে। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব ছড়ালে তারা হয়তো ভিউ পেতে পারে, টাকা আয় করতে পারে, কিন্তু এগুলো করে পুলিশের মনোবল ভাঙা যাবে না।’

উক্ত বিষয় নিয়ে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম, বাংলাদেশ পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুনের বহিস্কার বা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ডিএমপির ডিবি মোহাম্মদ প্রধান হারুন অর রশীদের বহিস্কার এবং তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবিতে প্রচারিত বিষয়গুলো সঠিক নয়।

মূলত, সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের(ডিএমপি)  গোয়েন্দা(ডিবি) প্রধান  মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বহিস্কার এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদকে বহিস্কার কিংবা তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি বরং হারুন ও তার স্ত্রীর চিকিৎসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতিসহ ৩ জুন থেকে ১৩ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ভিডিও প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের) গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে বহিস্কার এবং তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img