ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত ভ্যানচালক শাহীন মারা যায়নি

‘যশোরে ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত কিশোর ভ্যানচালক শাহীন মারা গেছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য বিগত কয়েক বছর যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

Screenshot from CrowdTangle

২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

২০১৯ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত কিশোর ভ্যানচালক শাহীন মারা যায়নি বরং সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে শাহীন সুস্থ আছে। 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ৩০ জুন তারিখে “সাতক্ষীরায় কিশোরকে কুপিয়ে দুর্বৃত্তদের ভ্যান ছিনতাই” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from ‘Prothom Alo’ website 

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার (২৮ জুন, ২০১৯) যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে ও মঙ্গলকোর্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ‘শাহীন’ ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছিল। দুপুরের দিকে কয়েকজন যাত্রীবেশী দুর্বৃত্ত তার ভ্যানটি ভাড়া নেয়। শাহীন তাদের নিয়ে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ার নামক এলাকায় যাচ্ছিল। পথে ধানদিয়া এলাকার একটা পাটখেতের পাশে শাহীনের ভ্যানটি দাঁড় করায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই দুর্বৃত্তরা শাহীনের মাথায় আঘাত করে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়। 

Screenshot from ‘Prothom Alo’ website 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে, ২০১৯ সালের ০১ জুলাই ‘দৈনিক সমকাল’ এর ওয়েবসাইটে “শাহিনের ভ্যান উদ্ধার, গ্রেফতার ৩” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ভ্যানচালক শাহীনের ওপর ছিনতাইকারীদের হামলার ঘটনায় প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from ‘Samakal’ website 

উক্ত প্রতিবেদনটিতে ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত কিশোর শাহীনের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করা বলা হয়, ‘ঘটনার পর মারা গেছে ভেবে শাহিনকে প্রথমে সাতক্ষীরা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখা হয়। নড়াচড়া করতে দেখে পরে মর্গের কয়েকজন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা ও শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ এছাড়া ছিনতাই এর ঘটনায় পুলিশ মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে বলে জানা যায়।

Screenshot from ‘Samakal’ website 

দৈনিক সমকালে’ প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যমতে জানা যায়, আহত শাহীনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে রাখা হয় এবং তার চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরবর্তীতে শাহীনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে জানা যায়।

Image Source : Samakal | Image collage by Rumor Scanner

উক্ত ঘটনায় গণমাধ্যম থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সে বছরের অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে শাহীন নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। 

Image Source ‘Daily Ittefaq’ | Image collage by Rumor Scanner 

উল্লেখ্য, শাহীন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরবর্তী সময়ে তার শারীরিক কোনো অসুস্থতা বা জটিলতার সংবাদ দেশীয় কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। 

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত করতে এবং শাহীন মোরলের বর্তমান অবস্থা জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: আব্দুল বারিকের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আব্দুল বারিক জানান, শাহীন বেঁচে আছে এবং শারীরিকভাবেও এখন সুস্থ। শাহীন মোড়লের মৃত্যুর বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মূলত, ২০১৯ সালের ২৮ জুন যশোরে অটোরিকশা চালক শাহীন মোড়লের মাথায় আঘাত করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় একদল দুর্বৃত্ত। আহত শাহীনকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলেও অবস্থার অবনতি হওয়াতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহীনের চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেন এবং প্রায় ৩ মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে সে বাড়ি ফিরে আসে। সে সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে শাহীনের রক্তাক্ত শরীরের কিছু ছবি ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছিলো। প্রকৃতপক্ষে শাহীনের রক্তাক্ত শরীরের ছবিগুলোই ব্যবহার করে ঘটনা পরবর্তী সময় হতে ভিত্তিহীনভাবে ‘অবশেষে শাহীন মারা গেছে’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

সুতরাং, সাতক্ষীরায় ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত ‘কিশোর ভ্যানচালক শাহীন মারা গেছে’ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img