দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া যাবে না শীর্ষক তথ্যটি কি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে?

সম্প্রতি “বিজ্ঞানও বলছে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া যাবে না” শীর্ষক একটি ফেসবুক পোস্ট মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘The Business Standard (TBS)’ এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়।

যা দাবি করা হচ্ছে

TBS এর ফেসবুক পেজের গত ৮ জানুয়ারী প্রকাশিত পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “দেহকে ডিটক্সিফাই করতে এবং সব পুষ্টি ও খনিজ উপাদান গ্রহণের জন্য যথাযথ উপায়ে পানি পান করতে হবে। দাঁড়িয়ে পানি খেলে তা প্রয়োজনীয় যেসব অঙ্গে পৌঁছা দরকার সেখানে ঠিকমত পৌঁছায় না। এর ফলে যেসব দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা তা কিডনি এবং ব্লাডারে জমা হয়।”

ব্যানারের শিরোনামে ‘বিজ্ঞান’ শব্দটি উল্লেখ থাকলেও পোস্টে বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো ব্যাখ্যা বা গবেষণার তথ্য উল্লেখ নেই। 

টিবিএসের উক্ত পোস্ট পরবর্তীতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিজ্ঞানও বলছে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া যাবে না শীর্ষক TBS এর দাবিটি সঠিক নয় বরং মূল প্রতিবেদনে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়ার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।

টিবিএসের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে উক্ত পোস্ট বিষয়ক একটি আর্টিকেল লিংক দেওয়া হয়েছে। 

সেই লিংকে গিয়ে ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারী “বিজ্ঞানও বলছে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া যাবে না!” শিরোনামে (আর্কাইভ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়৷ 

প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, “বড়রা অনেকসময়ই আমাদের দাঁড়িয়ে পানি পান করতে মানা করেন। বিজ্ঞানও এই সংস্কারের সঙ্গে একমত। চলুন জেনে নিই কেন দাঁড়িয়ে পানি পান করতে মানা করেছেন বিজ্ঞানীরা।”

কিন্তু বিস্তারিত প্রতিবেদনে বিজ্ঞান শব্দটিরই উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

এর পরিবর্তে “আয়ুর্বেদ কী বলে” শিরোনামে একটি প্যারায় ‘বসা অবস্থায় পানি পান করা’ বিষয়ক আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে তথ্যসূত্র হিসেবে টিবিএস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Times of India এর নাম উল্লেখ করেছে। অনুসন্ধানে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালে “Why you should NEVER drink water standing up” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সাথে টিবিএসের প্রতিবেদনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রতিবেদনে বিজ্ঞান শব্দটির উল্লেখ পায়নি রিউমর স্ক্যানার। 

অর্থাৎ, প্রতিবেদনটি অনুবাদ করে টিবিএস তাদের শিরোনামে বিজ্ঞান শব্দটি জুড়ে দিয়েছে কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেনি, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। 

দাঁড়িয়ে পানি পানে বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা আছে? 

দাঁড়িয়ে পানি পান বিষয়ের নেতিবাচক দিক নিয়ে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি।

অনেকেই বিশ্বাস করেন, দাঁড়িয়ে পানি পানের ফলে আর্থাইটিস, কিডনী বিকল, লিভার বিকলের মতো শারীরিক জটিলতা ঘটতে পারে। তবে চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদগণ দাঁড়িয়ে বা বসে পানি পানে এমন কোনো সমস্যা দেখছেন না। ভারতের দুইজন চিকিৎসক এ বিষয়ে তাদের মত দিয়েছেন।

ভারতের দিল্লীর ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. অশ্বিনী শেঠিয়া বলছেন, এই দাবির সত্যতা নেই৷ 

ভারতের পাটনার পুষ্টিবিদ রূপালী দত্ত বলছেন, “ন্যাচারোপ্যাথিতে (প্রাকৃতিক চিকিৎসা) বসা অবস্থাতেই পানি পান করাতে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পানি পানের সাথে সম্পর্কিত ক্ষতিকারক প্রভাবের কোনো ঘটনা আমি দেখিনি।” 

কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?

এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সংস্থাটির কমিউনিকেশন অফিসার জেমস আল্ডওর্থ (James Aldworth) রিউমর স্ক্যানারকে নিরাপদ পানি পান বিষয়ে প্রকাশিত সংস্থাটির কিছু গাইডলাইন পাঠালেও সেখানে দাঁড়িয়ে বা বসা অবস্থায় পানি পান বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম। এ বিষয়ে তাই ফের জানতে চাইলে জেমস আল্ডওর্থ জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাঁড়িয়ে বা বসে পানি পান করার বিষয়ে আলাদা কোনো পরামর্শ বা গাইডলাইন নেই।

 মূলত, ২০২২ সালে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘The Business Standard বাংলা (TBS)’ “বিজ্ঞানও বলছে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া যাবে না।” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনটি সম্প্রতি একই সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিবেদনের শিরোনামে ‘বিজ্ঞান’ শব্দটি উল্লেখ থাকলেও মূল প্রতিবেদনের কোথাও বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা বা গবেষণার বিষয় উল্লেখ পাওয়া যায়নি। বরং, উক্ত বিষয়ে আর্য়ুবেদ শাস্ত্রের ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া, প্রতিবেদনে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Times of India’র প্রতিবেদনে বিজ্ঞান শব্দটিরই উল্লেখ পায়নি রিউমর স্ক্যানার। অর্থাৎ, প্রতিবেদনটি অনুবাদ করে TBS তাদের শিরোনামে বিজ্ঞান শব্দটি জুড়ে দিয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

সুতরাং,, মূল প্রতিবেদনে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়ার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কোনো তথ্য উল্লেখ না করে টিবিএস “বিজ্ঞানও বলছে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া যাবে না” শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রচার করছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img