দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুগল, নাসা এবং বিবিসি নিউজের বরাতে “আজ রাত ১২ টা ৩০ থেকে ৩ টা ৩০ পর্যন্ত আপনার ফোন,মোবাইল,ট্যাব বন্ধ রাখুন এবং শরীর থেকে দূরে রাখুন” শীর্ষক একটি তথ্য প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে “সিঙ্গাপুর টেলিভিশন জানিয়েছে উক্ত সময়ে আমাদের পৃথিবী উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মহাজাগতিক রশ্মির সম্মুখীন হবে যা আমাদের পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে যাবে তাই আপনার ফোন বন্ধ রাখুন, আপনার ফোন শরীরের কাছে রাখবেননা- এতে আপনার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।”
উক্ত দাবিতে বাংলাদেশে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ভারতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
২০১৬ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
২০১৭ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
২০১৯ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
২০২০ সালে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের টেলিভিশন, গুগল, নাসা কিংবা বিবিসি নিউজ কেউই মহাজাগতিক রশ্মির কারণে ক্ষতির আশঙ্কায় সম্প্রতি রাতের নির্দিষ্ট সময় ফোন, মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে বলেনি। বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাতে এই বানোয়াট তথ্যটি ২০১৬ সাল থেকে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মার্কিন ফেডারেল সরকারের স্বাধীন সংস্থা নাসা এবং ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল একাডেমিক সার্ভিসেস বিভাগের প্রধান সুপালর্ক কারুহেনন ফ্রান্সের নিউজ এজেন্সি এএফপিকে আলোচিত এই সতর্কবার্তাটি “ভুয়া খবর” বলে জানিয়েছে।
তিনি বলেছেন, মহাজাগতিক রশ্মি, যা সূর্য থেকে বা আমাদের সৌরজগতের বাইরে মহাজাগতিক ঘটনা থেকে নির্গত হয় যেমন ব্ল্যাক হোল বা সুপারনোভা, উপগ্রহের কম্পিউটার চিপগুলোর মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে এই রশ্মি আমাদের শরীরকেও একইভাবে প্রভাবিত করবে।
এছাড়া, দেশের মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে উল্লেখিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
মহাজাগতিক রশ্মি কি?
মহাজাগতিক রশ্মি হলো অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার স্রোত। বহির্বিশ্ব থেকে ওই সব কণা এসে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। কণার ওই বারিবর্ষণ এক অবিশ্রান্ত প্রক্রিয়া। মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে শতকরা ৮৯ ভাগ প্রোটন, ৯ ভাগ বিকিরণ এবং ২ ভাগ থাকে কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও লোহার ভারি নিউক্লিয়াস। এগুলোই হলো প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মি। প্রায় আলোর বেগেই ওরা ছুটে চলে।
প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মির ওই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার যখন বায়ুমেন্ডলের বিভিন্ন পদার্থের নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তখন নতুন কণার সৃষ্টি হয়। নতুন কণাদের তখন বলা হয় সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মি। সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মির কণারাও প্রচন্ড বেগে ছুটে চলে। অন্যান্য পরমাণুর সঙ্গে ওদের আবার সংঘর্ষ হয় এবং আবার নতুন পদার্থ কণা ওরা সৃষ্টি করে। চলার পথে বহুবার সংঘর্ষ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পৃথিবী পৃষ্ঠে সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মির খুব কম সংখ্যক কণারাই এসে পৌঁছতে পারে। সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে প্রধানত পজিট্রন, নিউট্রন, মেসন, নিউট্রিনো প্রভৃতি। এ সব কণাদের বলা হয় প্রাথমিক বা মৌলিক কণা। এ নিয়ে বিস্তারিত দেখুন এখানে
মূলত, বিগত কয়েক বছর ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাসা এবং বিবিসি নিউজের বরাত দিয়ে দাবি প্রচার করে বলা হচ্ছে, সিঙ্গাপুর টেলিভিশনে একটি খবর প্রচারিত হয়েছে যে মহাজাগতিক রশ্মির জন্য রাত ১২.৩০ থেকে ৩.৩০ পর্যন্ত মোবাইল ফোন, মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে হবে যা মানবদেহের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে সিঙ্গাপুরের টেলিভিশন, গুগল, নাসা কিংবা বিবিসি নিউজ কেউই এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। এছাড়া, থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান প্রধান সুপালর্ক কারুহেনন প্রচারিত দাবিটিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে।
সুতরাং, মহাজাগতিক রশ্মির কারণে রাত ১২ টা ৩০ থেকে ৩ টা ৩০ পর্যন্ত ফোন,মোবাইল এবং ট্যাব বন্ধ রাখতে হবে শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Nasa : Website
- BBC NEWS : Website
- TNO : Website
- Uchicago News: Cosmic Rays