সেনাবাহিনীর সহায়তায় কারাগার থেকে মির্জা ফখরুলের মুক্তি পাওয়ার গুজব

গত ২১ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইলো মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ‘সেনাবাহিনীর সহায়তায় এইমাত্র কারাগার থেকে মুক্তি পেলো মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুলের মুক্তি

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১১ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় আড়াই শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

পরবর্তীতে একই ভিডিও আরেকটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচার করা হয়। ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত ভিডিওটি’র ইউটিউব লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেনাবাহিনীর সহায়তায় কারাগার থেকে মুক্তি পাননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন যেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং পুলিশ সদস্যদের পুরোনো কিছু কার্যক্রমের দৃশ্য দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি পেলো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ইতোমধ্যেই কারাগার থেকে বের হয়ে বিএনপির কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যেই বিএনপির আন্দোলনকে আরও চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীকে নির্দেশ প্রদান করেন।”

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন দুইটি ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই-১

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ অক্টোবর ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর’কে আদালতে আনা হয়েছে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: BNP YouTube Channel

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি গত ২৯ অক্টোবর মির্জা ফখরুলকে আদালতে নেওয়ার সময়ের।

ভিডিও যাচাই-২

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ০৯ জানুয়ারি ‘জেল থেকে বের হয়েই ফখরুলের হুঙ্কার, ‘পিছু হটবার কোনো পথ নেই’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jamuna TV YouTube

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ভিডিওটি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সময়ের।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ২১ ডিসেম্বর ‘মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন গ্রহণের আদেশ চেম্বার আদালতে বহাল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নয়টি মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদন গ্রহণ এবং আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতকে দেওয়া  হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেননি চেম্বার আদালত।

তবে বিচারিক আদালত জামিন আবেদন গ্রহণ না করলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে রিট আকারে আসতে পারে কি না, এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি হবে। গত ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, সেনাবাহিনীর সহায়তায় কারাগার থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় গত ২৯ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিনই আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে সম্প্রতি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে সেনাবাহিনীর সহায়তায় মির্জা ফখরুল কারাগার থেকে মুক্তি পেলো শীর্ষক একটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, আদালতে বেশ কয়েকবার মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন করা হলেও আদালত এখনও তাকে জামিন দেয়নি। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে একই ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিন্ন একটি ভিডিও প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সেনাবাহিনীর সহায়তায় কারাগার থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img