সম্প্রতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের ছাদে করে শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে গাছের ধাক্কায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যম প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন পূর্বপশ্চিম, প্রতিদিনের কাগজ, খুলনা গেজেট।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের ছাদে করে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে গাছের ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে উক্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ জন আহত হলেও কেউ নিহত হননি।
এ নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ০৭ সেপ্টেম্বর দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালেরকণ্ঠ এর ওয়েবসাইটে “চবির শাটল ট্রেনের ছাদে গাছের ধাক্কায় আহত অন্তত ২০“শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার(৭ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে হাটহাজারীর চৌধুরীহাট এলাকায় চট্টগ্রাম শহর থেকে শাটল ট্রেনের ছাদে করে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ জন আহত হন।
প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, চৌধুরীহাট এলাকায় রেললাইনে গাছের ডালপালা ঝুলে ছিল। শাটল ট্রেন চৌধুরীহাট ক্রস করার সময় ছাদে থাকা শিক্ষার্থীরা ঝুলে থাকা গাছ থেকে আঘাত পান। তাদের মুখে ও মাথায় আঘাত লাগে। আঘাতের ফলে বেশ কয়েকজন চলন্ত ট্রেন থেকে নিচে পড়ে যায়। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এছাড়া, একই বিষয়ে মূলধারার অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদন গুলো দেখুন ইউএনবি, ভয়েস অব আমেরিকা, চ্যানেল আই, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার।
উল্লিখিত কোনো গণমাধ্যমেই উক্ত ঘটনায় কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, একই দিনে মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এর ওয়েবসাইট “ট্রেনের ছাদে বসে দুর্ঘটনার শিকার ৩ ছাত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক” শীর্ষক শিরোনাম প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শাটল ট্রেনের ছাদে বসে গাছের ধাক্কায় আহতদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা হলেন- আমজাদ হোসেন সোহাগ (১৮), খলিলুর রহমান (২২) ও অংসইনু মারমা (২১)।
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহরিয়ার শান্তের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শাটল ট্রেন দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থী মৃত্যুর তথ্যটি ভুয়া। মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ টি বাস ভাংচুর করা হয়েছে।
অর্থাৎ, গত ০৭ সেপ্টেম্বর রাতে চবির শাটল ট্রেন দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ জন ব্যক্তি আহত হলেও কোনো ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়নি।
মূলত, গত ০৭ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখী শাটল ট্রেনের ছাদে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় ফেসবুকে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দাবি ছড়িয়ে পরে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, উক্ত দুর্ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী নিহত হয়নি।এছাড়া আহতদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
সুতরাং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Kaler Kantho : চবির শাটল ট্রেনের ছাদে গাছের ধাক্কায় আহত অন্তত ২০
- Bangla Tribune : ট্রেনের ছাদে বসে দুর্ঘটনার শিকার ৩ ছাত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক
- Statement of Chittagong University Correspondent
- The Daily Star Bangla : শাটল ট্রেনের ছাদে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে চবি শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৬ জন আহত