জামায়াত নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে গ্রেফতারের গুজব 

সম্প্রতি, এই মাত্র জামায়াত নেতা গ্রেফতার, ঢাকা ঘিরে ফেলছে জামাত শিবির মিনি কেয়ামত শুরু– শীর্ষক শিরোনামে এবং এই মাত্র জামায়াত নেতা ডক্টর মাসুদ গ্রেফতার, ঢাকা ঘিরে ফেলছে জামাত মিনি কেয়ামত শুরু– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ড. শফিকুল ইসলাম

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ গ্রেফতার করা হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একজন লাইভ ভিডিও এটি। ভিডিওটিতে দেখা যা পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া লাইভ করা ব্যক্তির ভাষ্যমতে ঘটনাটি গত ০৫ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররম এলাকার ঘটনা। 

ভিডিও যাচাই

আলোচিত ভিডিওটিতে পুলিশ কর্তৃক এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে দেখা যায়। ভিডিওতে উপস্থাপকের ভাষ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Musfiq R. Islam নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ০৫ জানুয়ারি “বায়ুতল মোকাররম থেকে সরাসরি ৫ জানুয়ারী ২০২৪ শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের প্রতিবাদ মিছিলে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলা এবং অনেক নেতা করমি গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটিতে পুলিশ কর্তৃক একজনকে গ্রেফতার করতে দেখা যায়। যার সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির চেহারার হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

এছাড়া, Alokito protidin নামক একটি ফেসবুক পেজে একই তারিখে “বাইতুল মোকাররম মসজিদের আশপাশে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি। চারদিকে থমথমে অবস্থা, জনমনে আ_শং_কা। কি জানি কি হয়!!” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটিতেও আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিকেই গ্রেফতার হতে দেখা যায়। 

তবে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির সাথে জামায়াতে ইসলামীর নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের চেহারার কোনো মিল নেই। 

Image Comparison: Rumor Scanner 

পাশাপাশি, দৈনিক ইত্তেফাকের ইউটিউব চ্যানেলে ০৫ জানুয়ারি “বায়তুল মোকাররম থেকে তিনজন আটক” শীর্ষক শিরোনামে একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটি থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেদিন জামায়াতে ইসলামীর নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ গ্রেফতার হননি। তবে তিনজন মুসুল্লিকে আটক করেছে পুলিশ। 

মানবজমিনের ওয়েবসাইটে ০৬ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও তিনজন মুসুল্লি আটকের তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ গ্রেফতার হওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

এরপর, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার হয়েছেন কি না সে বিষয় অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক মাধ্যমের বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তার গ্রেফতার হওয়ার দাবির একদিন পর অর্থাৎ ০৬ জানুয়ারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেনে। 

Screenshot: Dr. Md. Shafiul Islam Masud Facebook Post 

মূলত, গত ০৫ জানুয়ারি  জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে কিছুসংখ্যক মুসল্লি সরকারবিরোধী বক্তব্য ও ৭ তারিখের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে উপস্থিত অনলাইন গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেন। ঐ সময় ঘটনাস্থল থেকে তিন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করা হয়, ঐ স্থান থেকে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনাস্থলে জামায়াত নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ উপস্থিতই ছিলেন না এবং তাকে গ্রেফতারও করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার ভিডিওতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, জামায়াতে ইসলামীর নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img