সম্প্রতি “বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতি সম্মানস্বরূপ আর্জেন্টাইন ফুটবলার রদ্রিগো ডি পল তার পিঠে বাঘের ট্যাটু করেছেন” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
এ বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে বলা হচ্ছে, “বাঘের ট্যাটু করা নিয়ে রদ্রিগো ডি পলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- “আমি জানি বাংলাদেশের মানুষ আমাকে কত ভালোবাসে। আমার নিজের দলের প্লেয়াররা যেখানে আমাকে সেরা মিডফিল্ডার ভাবে না, বাংলাদেশের মানুষ আমাকে সর্বকালের সেরা মিডফিল্ডার বলে। এই ভালোবাসা আমি মুখে প্রকাশ করতে পারি না। তাই বাংলাদেশিদের প্রতীক হিসেবে বাঘের ট্যাটু করেছি আমার পিঠে। আমি বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বাংলদেশে যাবো এবং আমার ইচ্ছা আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে সাক্ষাৎ করা।”
অর্থাৎ, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতি সম্মানস্বরূপ আর্জেন্টাইন ফুটবলার রদ্রিগো ডি পল তার পিঠে বাঘের ট্যাটু করেছেন এবং শীঘ্রই তিনি বাংলাদেশে আসছেন ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে দেখা করবেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রদ্রিগো ডি পলের বাঘের ট্যাটু করার সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তিনি বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও কোনো মন্তব্য করেননি বরং বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের টাইগার তকমাকে ব্যবহার করে পলের বাঘের ট্যাটুর বিষয়ে উক্ত দাবি ব্যঙ্গাত্মকভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর কাতারে ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। রদ্রিগো ডি পল বিশ্বকাপ জয়ী দলটিতে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেছেন।
কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমেই রদ্রিগো ডি পলের বাংলাদেশ বিষয়ে করা মন্তব্য সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, রদ্রিগো ডি পলের অফিশিয়াল ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
অর্থাৎ, কোনোরকম তথ্যসূত্র ছাড়াই রদ্রিগো ডি পলের বাংলাদেশ বিষয়ে মন্তব্য শীর্ষক দাবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ট্যাটুটি কি বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে করেছিলেন রদ্রিগো ডি পল?
রদ্রিগো ডি পলের ট্যাটুর বিষয়ে অনুসন্ধানে তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়৷
পোস্টে সংযুক্ত ছবিতে তার পিঠে আলোচিত বাঘের ট্যাটুটি দেখতে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, রদ্রিগো ডি পল সাম্প্রতিক সময়ে বাঘের ট্যাটু করাননি বরং প্রায় চার বছর পূর্বে থেকেই তার পিঠে উক্ত ট্যাটু দেখা যায়৷
বাংলাদেশের সাথে এই ট্যাটুর সম্পর্ক কী?
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে টাইগার নামে ডাকা হয়ে থাকে। এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি), অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের ইউআরএল নামও Tiger Cricket.
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় দলের অফিশিয়াল জার্সির ডিজাইন প্রকাশ করে বিসিবি। নতুন এই জার্সির সামনের অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখাবয়ব দেখা যায়।
বাঘের এই মুখাবয়বের সাথে রদ্রিগো ডি পলের পিঠের বাঘের ট্যাটুর মিল প্রতীয়মান হয়।
গুজবের সূত্রপাত কীভাবে?
গত ২২ ডিসেম্বর ফেসবুকে ‘ভ্যামোস আর্জেন্টিনা’ নামক পেজে এ বিষয়ে প্রথম পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। পোস্টের উক্ত তথ্যগুলোর উৎস হিসেবে প্রথম কমেন্ট দেখতে বলা হয়।
প্রথম কমেন্টে বলা হয়েছে, “আমাদের একেকটা কথা একেকটা সোর্স”।
অর্থাৎ, পোস্টের তথ্যগুলো বাস্তব নয়। স্যাটায়ার হিসেবে উক্ত তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজে নিয়মিত এই ধরনের স্যাটায়ার বা ব্যাঙ্গাত্মকধর্মী পোস্ট করা হয়।
মূলত, গত ১৮ ডিসেম্বর ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেছেন রদ্রিগো ডি পল। তার পিঠে ২০১৮ সাল থেকেই বাঘের ট্যাটু দেখা যায়। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতি সম্মানস্বরূপ রদ্রিগো ডি পল তার পিঠে বাঘের ট্যাটু করেছেন এবং শীঘ্রই তিনি বাংলাদেশে আসছেন ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে দেখা করবেন বলে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷ তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি হাস্যরসাত্মক হিসেবেই প্রচার করা হচ্ছে। বাস্তবে এমন কোনো মন্তব্য করেননি রদ্রিগো ডি পল।
প্রসঙ্গত, সদ্য সমাপ্ত কাতার ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতি সম্মানস্বরূপ আর্জেন্টাইন ফুটবলার রদ্রিগো ডি পল তার পিঠে বাঘের ট্যাটু করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা ব্যঙ্গাত্মক।
তথ্যসূত্র
- Instagram: rodridepaul
- BCB: Jersey Design
- ভ্যামোস আর্জেন্টিনা: Post