“সাউথ আফ্রিকার তারকা রাইলি রুশো মূলত চেয়েছিলেন বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলতে, কিন্তু দুঃখের বিষয় বিসিবি তাকে কোন মূল্য দেয় নি তথা নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন তাও দেয় নি” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
একই দাবিতে ২০১৯ সালে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাইলি রুশো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাননি বরং ভিত্তিহীনভাবে উক্ত বক্তব্যটি তার নামে প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মূল ধারার কোনো গণমাধ্যমেই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার রাইলি রুশো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চেয়েছেন এমন তথ্য সম্বলিত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গুজবের সূত্রপাত কীভাবে?
এডভান্সড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে ফেসবুকে ২০১৯ সালের ২৪ জুন ‘Sheikh Kayes Ahmed’ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) এ সংক্রান্ত দাবিটি প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত পোস্টে বলা হয়, “যদি বাংলাদেশ আমাকে সুয়োগ দেয় আমি প্রয়োজনে এখানে থেকে নাগরিকক্ত্ব নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলতে চাই।। রাইলি রুশো (আফ্রিকা) সোর্সঃযমুনা টিভি”
এই পোস্টে ‘যমুনা টিভি’কে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে মূলধারার এই সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইট অনুসন্ধানে রাইলি রুশো’র এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় নি।
জাতীয় দল কেন ছেড়েছিলেন রাইলি রুশো?
২০১৪ সালের আগস্টে অভিষেক হবার পর ৩৬টি ওয়ানডে ও ১৫টি টি২০ খেলার পর রাইলি রুশো কোলপ্যাক চুক্তির আওতায় ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে তিন বছরের চুক্তিতে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল হ্যাম্পশায়ারে।
কোলপ্যাক চুক্তির মাধ্যমে ইইউভুক্ত (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) যেকোনো দেশের নাগরিকরা অন্য ইইউ যেকোনো দেশে গিয়ে খেলতে পারে। এই চুক্তিতে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকরা আরেক ইইউভুক্ত দেশে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য বা সবক্ষেত্রে একজন নাগরিকের সমান সুযোগ সুবিধা পান। দক্ষিণ আফ্রিকা ‘কতনু’ নামক এক চুক্তির মাধ্যমে ইইউর সাথে সম্পর্কযুক্ত। জিম্বাবুয়ে ও কিছু ক্যারিবিয়ান দেশও এই চুক্তির আওতাধীন। এ কারণে এ দেশগুলো কোলপ্যাক চুক্তির সুবিধা নিতে পারে।

ইংলিশ কাউন্টি ক্লাবগুলোর সঙ্গে হয় কোলপ্যাক চুক্তি। যেকোনো দেশের খেলোয়াড় এই চুক্তির আওতায় যেতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাড়া দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের চেয়ে বেশি টাকা পাওয়ায় সেই পথে হাঁটছেন তারা।
কোনো ইংলিশ ক্লাবের সঙ্গে কেউ চুক্তি করলে সাধারণত তাকে জাতীয় দলে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিতে হয়। কারণ, কমপক্ষে ২ বছর থেকে অধিক সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। পরে চুক্তি নবায়নও করা যায়। এ সময়ে দেশের হয়ে খেলতে পারেন না তারা। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে জানানো হয়েছিল, রুশো আর কোনোদিনই জাতীয় দলে ডাক পাবেন না। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিল বোর্ড। রুশো দীর্ঘ ছয় বছর পর গত জুলাইয়ে জাতীয় দলে ফের ডাক পেয়ে যোগ দেন, খেলেন চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও।
রুশো ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) সর্বোচ্চ রান (৫৮৮) করেন৷ উক্ত আসর চলাকালীন ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারী একটি ম্যাচের আগে সাংবাদিকদের সামনে দলের প্রতিনিধি হয়ে এসে নানান প্রশ্নের উত্তর দেন রুশো। তার সেই বক্তব্যেও বাংলাদেশ হয়ে খেলার আগ্রহের ব্যাপারে কোনো তথ্য মেলেনি।
অর্থাৎ, রাইলি রুশো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চেয়েছেন এমন দাবিটি বানোয়াট।
মূলত, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার রাইলি রুশো ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের হয়ে জাতীয় দলে খেলেছেন। ২০১৭ সালে ‘কোলপ্যাক’ নামক একটি চুক্তির সুযোগ নিয়ে জাতীয় দল ছেড়ে ইংলিশ কাউন্টি খেলতে চলে যান রুশো। একইসাথে বিশ্বব্যাপী নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগেও তাকে নিয়মিত খেলতে দেখা গিয়েছিল৷ দক্ষিণ আফ্রিকা দলে না থাকার সুযোগে ‘রাইলি রুশো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিসিবি তাকে কোন মূল্য দেয়নি’ শীর্ষক একটি তথ্য ২০১৯ সাল থেকে প্রচার হয়ে আসছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে তথ্যটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কিংবা কোন নির্ভরযোগ্য মাধ্যমেই এ তথ্য নিয়ে কোন সূত্র মেলেনি। তাছাড়া, রুশো এ বছরের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ফিরেছেন।
সুতরাং, রাইলি রুশো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন শীর্ষক দাবিটি ভুয়া ও ভিত্তিহীন।
তথ্যসূত্র
- Sheikh Kayes Ahmed: Facebook Post
- Cricinfo: Domingo fury as Rossouw quits SA for Kolpak deal