চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর মধ্যে গত ১৮ জানুয়ারি চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তের মধ্যবর্তী এলাকায় ভারতীয় নাগরিকরা গম কাটতে এসে বাংলাদেশের কয়েকটি আমগাছের ডাল কেটে দিলে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় বাংলাদেশী বাহিনীর হামলায় ৯৪ জন ভারতীয় সৈনিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

এক্সে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ৯৪ জন ভারতীয় সৈনিক আহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং, এই ঘটনায় বাংলাদেশি নাগরিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও ভারতীয় কেউ আহত হননি বলে জানা যাচ্ছে।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশী এবং ভারতীয় মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোর সূত্রে ৯৪ জন ভারতীয় সৈনিক আহত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইকোনোমিক টাইমস এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ জানুয়ারি Crop wars at border: Indian, Bangladeshi farmers clash over mango trees and more শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার ভারতের মালদার সুখদেবপুর সীমান্তে ফসল কেটে নেওয়া এবং আম গাছ কাঁটা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশি কৃষকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উক্ত ঘটনায় কোনো পক্ষেরই কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান বিএসএফ ডিপুটি কমিশনার রাকেশ সিং। তবে প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশি গণমাধ্যম প্রথমআলো’র বরাত দিয়ে উক্ত সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক আহতের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও উক্ত ঘটনা নিয়ে আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক প্রথমআলো’র ওয়েবসাইটে গত ১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এতে তিন বাংলাদেশি আহত হন। এদের মধ্যে বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার মেসবাহুল হক নামের একজন যুবক ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হন। অন্য দুজনের মধ্যে বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো. রনি ভারতীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে ও মো. ফারুক হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন।
অর্থাৎ, চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তের ঘটনায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও কোনো ভারতীয় সৈনিক আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ৯৪ জন ভারতীয় সৈনিক আহত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Economic Times Website: Crop wars at border: Indian, Bangladeshi farmers clash over mango trees and more
- The Times of India Website: India, Bangladesh farmers clash over ‘stolen crop’, ‘cutting of mango trees’
- Prothom Alo: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে আবার উত্তেজনা, হামলায় ৩ বাংলাদেশি আহত