অস্ট্রেলিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জনের দাবিটি ভিত্তিহীন

সম্প্রতি “আলহামদুলিল্লাহ… অস্ট্রেলিয়ায় ১০৯ টি দেশকে হারিয়ে পবিত্র কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশের হাফেজ মুস্তাফিজ ও সাকিব..!” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানেএখানে পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়াতে ১০৯ টি দেশকে হারিয়ে কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাকিব ও মুস্তাফিজের প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়ার কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি বরং বিষয়টি কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

গুজবের সূত্রপাত

ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দেখা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর একটি ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টালে “অস্ট্রেলিয়াতে ১০৯ টি দেশকে হারিয়ে কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান বাংলাদেশের সাকিব ও মুস্তাফিজ” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদনটিতে প্রবেশ করা যায়নি।

পরবর্তীতে ৭ সেপ্টেম্বর Newsnowlive24.com নামের আরেকটি অনলাইন পোর্টালে “অস্ট্রেলিয়াতে ১০৯টি দেশ কে হারিয়ে পবিত্র কোরআন প্রতিযোগিতায় ১ ও ২য় স্হান বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ও সাকিব” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

তবে এই প্রতিবেদনটিতেও বিস্তারিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে বিষয়টি সম্পর্কে আরও অনুসন্ধানে বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমেও ১০৯ টি দেশের অংশগ্রহণে আয়োজিত এমন কোনো প্রতিযোগিতার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সচরাচর এমন কোনো প্রতিযোগিতা হলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ও আয়োজক দেশগুলোর গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

যেমন, সম্প্রতি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার ৪২ তম আসর অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১১১ টি দেশ থেকে ১৫৩ জন প্রতিযোগী অংশ নেন৷ ইন্টারনেটে অনুসন্ধানে আয়োজক দেশ ও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানে

কিন্তু বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত অস্ট্রেলিয়াতে ১০৯ টি দেশের অংশগ্রহণে কুরআন প্রতিযোগিতা নিয়ে এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, কোনো তথ্যসূত্র ও সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করা ছাড়াই কিছু ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াতে ১০৯ টি দেশকে হারিয়ে কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাকিব ও মুস্তাফিজের প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়ার দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে এ প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার ৪২ তম আসরে বাংলাদেশের হয়ে পুরস্কার জিতেন মুহাম্মদ সালেহ আহমেদ তাকরিম। ৫টি শাখায় ১১১টি দেশের ১৫৩ জন প্রতিযোগী নিয়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় সালেহ আহমেদ  চতুর্থ শাখায় (শুদ্ধ উচ্চারণসহ ১৫ পারা কোরআন মুখস্ত) তৃতীয় হয়েছেন বাংলাদেশের সালেহ আহমেদ তাকরিম।

তার এই পুরস্কার জেতা নিয়েও বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি করা হয় যে, সালেহ আহমেদ তাকরিম ১৫৩ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে তৃতীয় হয়েছেন। তবে এই বিষয়টিকে আংশিক মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, অস্ট্রেলিয়াতে ১০৯ টি দেশকে হারিয়ে কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাকিব ও মুস্তাফিজের প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়; এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

Newsnowlive24.com: অস্ট্রেলিয়াতে ১০৯টি দেশ কে হারিয়ে পবিত্র কোরআন প্রতিযোগিতায় ১ ও ২য় স্হান বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ও সাকিব

Daily Star: আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১১ দেশের মধ্যে ৩য় বাংলাদেশের তাকরিম

রিউমর স্ক্যানার টিমের নিজস্ব অনুসন্ধান।

আরও পড়ুন

spot_img