সম্প্রতি ‘ছোট্ট ছেলে মায়ের হাতে ছাড়া ভাত খাবে না, কিন্তু মা তো আর নেই, স্ত্রীর শাড়িটা পরে বাচ্চাটিকে খেতে ডাকছে বাবা’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সন্তানের মা না থাকায় স্ত্রীর শাড়ি পরে বাচ্চাকে খেতে ডাকছেন বাবা শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ছবি সম্বলিত তথ্যটি বানোয়াট বরং কলকাতার তিয়াষ মুখোপাধ্যায় কর্তৃক তার বাবাকে নিয়ে করা আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট থেকে ছবি সংগ্রহ করে উক্ত বানোয়াট তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটির সত্যটা যাচাইয়ে পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স যাচাই করে দেখা যায়, সেখানে অনেক নেটিজেনই বিষয়টিকে সত্য ভেবে কমেন্ট করেছেন।
আবার অনেক নেটিজেন বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন।
তাদের এই সন্দেহের সূত্র ধরে কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
মূল পোস্টটির ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে সেই পোস্টটির কমেন্টবক্স যাচাই করা হয়।
এছাড়া ছবিটির মূল পোস্টদাতা তিয়াষ মুখোপাধ্যায়ের সাথেও যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিয়াষ মুখোপাধ্যায় রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এটা আমার বাবার ছবি। আমি ঘটনাটি দু’লাইন লিখে পোস্ট করেছিলাম। তার পরে এটা ভাইরাল হয়েছে এবং যে যেমন ইচ্ছে গল্প বানিয়েছে। সাম্প্রতিক পোস্টে যা লেখা আছে, পুরোপুরি মিথ্যে।
ঘটনার সূত্রপাত
গত বছরের ১৫ জুলাই তিয়াষ মুখোপাধ্যায় নামের কলকাতার এক ব্যক্তির ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে(আর্কাইভ) লেখা হয়, “ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি। হঠাৎ দরজায় এসে বলছে, ‘ভাত খাবি আয়।’ এত তাড়াতাড়ি, একটার সময় আবার কবে ভাত খাওয়া হয়! প্রথমে না তাকিয়েই উত্তর দিলাম, এই তো চা খেলাম! এখন কী ভাত খাব! বলার পরেও আবার বলছে, ‘ভাত খাবি আয়।’ তাকিয়ে দেখি, বাবা। মা সেজেছে। ছাদ থেকে মায়ের শাড়ি তুলতে এসে সেটা নিয়ে খেলা করতে ইচ্ছে হয়েছে আর কী। সেই সঙ্গে আমাকে মুদ্ধ করতেও! তাই এই ‘মায়ের মতো’ ডাক। এক্সপেক্টেশন এটাই, যে আমি দেখে সত্যিই ভাবব, মা খেতে ডাকতে এসেছে। বাবাকে অবিকল মা ভেবে খুব চমকাব আর কি। যাই হোক…ছবিটা দেখার পরে যাওয়ার সময় বললো, ‘সায়া বেরিয়ে গেছে। কোথাও যেন দিস না ছবি।’
অর্থাৎ, আলোচিত দাবির পোস্টগুলোর ক্যাপশন ও কমেন্ট যাচাই এবং আলোচিত ছবির মূল পোস্ট পর্যালোচনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, মূল ঘটনার ব্যক্তিটির মা জীবিত আছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ছড়িয়ে পড়া বানোয়াট গল্পে বাচ্চাটির মা জীবিত নেই বলে দাবি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ছবির মূল ঘটনায় সন্তানটি প্রাপ্তবয়স্ক, কিন্তু বানোয়াট গল্পে সন্তানকে বাচ্চা হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
মূলত, ২০২২ সালের ১৫ জুলাই কলকাতার তিয়াষ মুখোপাধ্যায় হোম অফিস করার সময় তার বাবা তাকে চমকে দিতে মায়ের শাড়ি পড়ে মা সেজে তাকে খেতে ডাকেন। এই ঘটনা বর্ননা করে তিনি বাবার শাড়ি পরিহিত ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওই ঘটনার ছবির সাথে ‘ছোট্ট ছেলে মায়ের হাতে ছাড়া ভাত খাবে না, মা না থাকায় তার বাবা স্ত্রীর শাড়ি পরে বাচ্চাকে খেতে ডাকছে’ শীর্ষক বানোয়াট গল্প জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে’ছোট্ট ছেলে মায়ের হাতে ছাড়া ভাত খাবে না, মা না থাকায় তার বাবা স্ত্রীর শাড়ি পরে বাচ্চাকে খেতে ডাকছে’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- তিয়াষ মুখোপাধ্যায়; facebook post
- Rumor Scanner Own Analysis
