সম্প্রতি, চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকার একটি পার্লারের ওয়াশরুম থেকে প্রিয়াঙ্কা দত্ত নামে এক হিন্দু মহিলার ঝুলন্ত মরাদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে “প্রিয়াংকা দত্তের মৃত্যু আত্মহত্যা নয় মার্ডার” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের ‘নাদিয়াস মেকওভার’ পার্লারের ম্যানেজার প্রিয়াঙ্কা দত্ত নামক এই হিন্দু নারী খুন হননি বরং, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দৈনিক দেশ রূপান্তরের ওয়েবসাইটে গত ০৫ সেপ্টেম্বরে ‘পার্লারের ওয়াশরুমে তরুণীর মরদেহ, চিরকুটে হতাশার বার্তা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, গত ০৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ের এরিয়াল লিজেন্ড ভবনের অষ্টম তলায় অবস্থিত ‘নাদিয়াস মেকওভার’ পার্লারের ওয়াশরুম থেকে প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস নামে এক নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ডায়েরিতে হাতে লেখা কয়েকটি বাক্য পাওয়া যায়, যাতে ব্যক্তিগত হতাশা ও দায়িত্বের চাপে ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত রয়েছে। সেখানে লেখা ছিলো “আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? দায়িত্বের সঙ্গে আর পেরে উঠছি না… এত দায়িত্ব কেন আমার? আমি শান্তি চাই, শুধু বিশ্রাম।”
উক্ত প্রতিবেদনটিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন অন্তর্ভুক্ত পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমানের বক্তব্য পাওয়া যায়। যেখানে তিনি, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং পার্লার থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটটি তদন্তের অংশ হিসেবে জব্দ করা হয়েছে বলে জানান।
তাছাড়া, ‘Tasnuva Anwar’ নামক আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসের ডায়রিতে থাকা লিখার ছবি প্রচার হতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে, আলোচিত ‘নাদিয়াস মেকওভার’ বিউটি পার্লারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একই তারিখে অর্থাৎ গত ০৫ সেপ্টেম্বরে প্রচার হওয়া একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। পার্লারের সিসিটিভি ফুটেজ সংযুক্ত এই ভিডিওটিতে, প্রিয়াঙ্কা সকালে পার্লারে প্রবেশের সময় থেকে শুরু করে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় পর্যন্ত তার গতিবিধি এবং কার্যকলাপ পরিচালনা করতে দেখা যায়। পাশাপাশি, পুলিশ এসে দরজা কেটে তার মৃতদেহ উদ্ধার করছে সে দৃশ্যও ধরা পড়ে ক্যামরায়।
অর্থাৎ, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মৃত্যুর পূর্বে ডায়রিতে লিখা এবং পুলিশের পর্যবেক্ষণে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে বিবেচিত হয়। পাশাপাশি, প্রিয়াঙ্কার পরিবার থেকেও খুনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি।
সুতরাং, চট্টগ্রামের ‘নাদিয়াস মেকওভার’ পার্লারের ম্যানেজার প্রিয়াঙ্কা দত্ত খুন হয়েছেন বলে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Desh Rupantor: পার্লারের ওয়াশরুমে তরুণীর মরদেহ, চিরকুটে হতাশার বার্তা
- Tasnuva Anwar: Facebook Post
- Nadia’s Makeover: Facebook Live
- Rumor Scanner’s Analysis