গ্রিসে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেফতারের দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এক বাংলাদেশি অভিবাসী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন শেখকে গ্রিসে ৯ বছর বয়সী খ্রিস্টান নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বিশ্বজুড়ে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।” (অনূদিত)

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশি অভিবাসী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন শেখকে গ্রিসে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং প্রায় ২ বছর পূর্বের ২০২৩ সালের। তাছাড়া, ধর্ষিতা ৯ বছরের নাবালিকা নয় বরং পূর্ণবয়স্কা ছিলেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Visegrád 24’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ২২ জুনে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, “ব্রেকিং: | বাংলাদেশি অভিবাসী সালাহউদ্দিন এস, যাকে গ্রিসের কস দ্বীপে ২৭ বছর বয়সী পোলিশ হোটেল কর্মী আনাস্তাসিয়া রুবিনস্কার হত্যার সন্দেহভাজন হিসেবে ধরা হয়েছে, তাকে আজ আদালতে নেওয়া হয়েছে। আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে তিনি হেফাজতে থাকবেন। পোলিশ প্রসিকিউটরদের তার জিজ্ঞাসাবাদে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।” (অনূদিত)

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে এ বিষয়ে পোল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পোল্যান্ড ডেইলি২৪ এ ২০২৩ সালের ২৫ জুনে “Bangladeshi National Faces Additional Rape Charge in Anastasia Murder Case, New Footage Revealed” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “গ্রিসের কস দ্বীপে হত্যাকাণ্ডের মামলায় অভিযুক্ত ৩২ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক সালাহউদ্দিন এস.-এর বিরুদ্ধে ধর্ষণের নতুন অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ ছিল। অভিযোগ অনুসারে, ২৭ বছর বয়সী পোলিশ নারী আনাস্তাসিয়া রুবিনস্কাকে অভিযুক্ত ব্যক্তি ধর্ষণ করেছিলেন। তবে, সন্দেহভাজনের আইনজীবী মামলাটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।  

শুক্রবার (২৩ জুন ২০২৩) আদালতে হাজির হওয়ার সময় বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে আনাস্তাসিয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়, যা আগের হত্যা অভিযোগের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এর আগে তাকে অপহরণের অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল। গ্রিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে পুলিশ তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ পেয়েছে, যা প্রমাণ করতে পারে যে ১১ বছর ধরে দ্বীপটিতে বসবাসকারী এই ব্যক্তি পোলিশ নারীর হত্যার জন্য দায়ী।” (অনূদিত)

এছাড়া মূলধারার সংবাদমাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউনে ২০২৩ সালের ২৬ জুনে “গ্রিসে পোলিশ নারীকে হত্যার অভিযোগে এক বাংলাদেশি গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়।

পরবর্তীতে এ বিষয়ে ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বরে মূলধারার সংবাদমাধ্যম আজকের পত্রিকা’র ওয়েবসাইটে “পোলিশ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে গ্রিসে বাংলাদেশি যুবকের যাবজ্জীবন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “পোল্যান্ডের নাগরিক আনাস্তাসিয়াকে (২৭) অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে বাংলাদেশি যুবক সালাহউদ্দিনকে (৩৩) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন গ্রিসের একটি আদালত। গতকাল শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর ২০২৪) ঘোষিত এই রায় গ্রিসের গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গ্রিসের কস দ্বীপে সংঘটিত এ ঘটনার মামলাটি সাম্প্রতিক দশকগুলোর অন্যতম নৃশংস অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে গ্রিক গণমাধ্যমে।…

গ্রিক সংবাদমাধ্যম রোদিয়াকি জানিয়েছে, পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় আসামি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তবে তাঁর আবেদন আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এদিকে নিহত পোলিশ নারীর বাবা পোলিশ গণমাধ্যম ভার্চুয়ালনা পোলাস্কাকে জানিয়েছেন, এই রায় এখনো চূড়ান্ত নয়।…কস দ্বীপের একটি হোটেলে কাজ করতেন আনাস্তাসিয়া। ২০২৩ সালের জুনের কোনো এক দিনে তিনি তাঁর কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার পর নিখোঁজ হন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তিনি দক্ষিণ এশীয় কিছু কর্মীর সঙ্গে কেনাকাটা ও আড্ডা দিচ্ছেন, যাদের মধ্যে সালাহউদ্দিনও ছিলেন। পরে তাঁকে ওই ব্যক্তির স্কুটারে চড়ে তাঁর বাসায় যেতে দেখা যায়। এটিই ছিল আনাস্তাসিয়াকে জীবিত অবস্থায় শেষবার দেখা।…”

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং প্রায় ২ বছর পূর্বে ২০২৩ সালে ঘটেছিল। তাছাড়া, নিহত হওয়া নারী ৯ বছরের নাবালিকা ছিলেন না বরং ২৭ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কা ছিলেন।

সুতরাং, ২০২৩ সালে বাংলাদেশি নাগরিক সালাহউদ্দিন কর্তৃক ২৭ বছর বয়সী নারীকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে সালাহউদ্দিন কর্তৃক ৯ বছর বয়সী নাবালিকা মেয়ের ধর্ষণ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img