সম্প্রতি, ‘ইতালিতে শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার দলের লোকজনই তাকে ভুয়া-ভুয়া বলে স্লোগানে মুখর হল’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইতালিতে শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার দলের লোকজন তাকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়নি বরং ইতালী আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হাসান ইকবালের নেতৃত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে নতুন কমিটির সাধারন সম্পাদক আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে আলমগীর ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একাত্তর টেলিভিশনের ইউরোপ প্রতিনিধি Nurul Wahid এর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে গত ২৬ জুলাই ‘হাসান ইকবালের ভিডিও ফাঁস! ইতালী আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হাসান ইকবালের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানে বর্তমান সাধারন সম্পাদক আলমগীর ভুয়া ভুয়া বলে হট্রগোলের অপচেষ্টা। ভিডিওতে দেখা যায় হাসান ইকবাল বার বার পেছন থেকে লোকজনকে হাতের ইশারায় হট্রগোল করার জন্য উস্কানী দেন।’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একই ঘটনায় ধারণাকৃত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পুক্ষানুপুক্ষভাবে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ইতালী আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হাসান ইকবাল বার বার পেছন ফিরে লোকজনকে হাতের ইশারায় ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেওয়ার জন্য উস্কানী দিচ্ছেন।
পরবর্তী অনুসন্ধানে Nurul Wahid এর ফেসবুক প্রোফাইলে ‘ইতালী আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ইদ্রিস ফরাজী ও সাধারন সম্পাদক হাসান ইকবালকে দল থেকে বহিস্কার করা হউক। সাধারন নেতা কর্মীর এখন সময়ের দাবী।’ শীর্ষক শিরোনামে আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত একজন ভদ্রলোক সেদিনের মূল ঘটনা জানানোর দাবি করে বলেন, ‘সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবধনা দেওয়ার প্রাক্কালে নেত্রীর নির্দেশে ইতালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মঞ্চে বক্তৃতা দিতে যান। তখন কিছু সংখ্যক লোক ইতালি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইদ্রিস ফারাজি এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবালের নেতৃত্বে কার্ড নকল করে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করে আলমগীরকে ভুয়া ভুয়া বলে নেত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করার চেষ্টা করে। তখন নেত্রী নো নো বলে তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন। জনাব মাহাতাব হোসেন ও আলমগীর হোসেনের কমিটিকে লিখিতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন সেহেতু তিনি আলমগীর হোসেনকে মঞ্চে ডেকেছেন এবং পরবর্তীতে সভাপতি মাহাতাব হোসেনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন বিএনপি-জামায়াত যদি এটাকে পুজি করে ট্রল করতে চায় তাহলে তাদের উদ্দেশ্য কখনোই সফল হবে না।’
অর্থাৎ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেওয়া হয়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ জুলাই ইউনাইটেড নেশনস ফুড সিস্টেম সামিট+২ স্টকটেকিং মোমেন্টে (ইউএনএফএসএস+২) সহ বেশকিছু প্রোগ্রামে যোগ দিতে ৩ দিনের সফরে ইতালি যান। সেখানে ইতালি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। যেখানে কয়েকজন মানুষকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ভিডিওটি ‘ইতালিতে শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার দলের লোকজনই তাকে ভুয়া-ভুয়া বলে স্লোগানে মুখর’ দাবিতে প্রচার করা হয়। কিন্তু রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ইতালি আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যবর্তী দ্বন্দের কারণে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মঞ্চে উঠলে সাবেক সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তার সমর্থকগোষ্ঠী আলমগীর ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন।
সুতরাং,ইতালিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার দলের লোকজনই তাকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগানে মুখর হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।