গত ২৭ অক্টোবর রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনের সড়ক দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় ৭ তরুণকে চাপা দেয় একটি প্রাইভেটকার। এ ঘটনায় তরুণদের বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন দাবিতে ঘটনাটির একটি সিসিটিভি ফুটেজসহ একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে ৭ তরুণকে প্রাইভেটকারের ধাক্কার ঘটনায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি কেউ মারা যাননি। উক্ত ঘটনায় তিনজন গুরুতর আহত অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি চারজন সামান্য আহত হয়েছেন।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি-র ওয়েবসাইটে ২৭ অক্টোবর বিকেল ৫ টা ৪৮ মিনিটে সাত ছাত্রের ওপর উঠিয়ে দেওয়া হলো প্রাইভেটকার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুস্তাফিজুর রহমান জানান সেদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। দুজনের পা ভেঙে গেছে আর একজন মাথায় আঘাত পেয়েছেন। এছাড়াও জানা যায়, আহতদের পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির কোথাও উক্ত দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে কিংবা হাসপাতালে মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া একই ঘটনায় মূলধারার জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ‘রাস্তার পাশ ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ গাড়িটি আমাদের ওপর উঠিয়ে দিল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনায় আহত একাধিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারসহ আহতদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, উক্ত দুর্ঘটনার কবলে পড়া সাতজন নৌবাহিনীর ‘সিম্যান’ পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তারা হলেন সামিউল ইসলাম, মামুন অর রশীদ, মো. আকাশ, আতিক মাহাবুব নুর, ফজলে রাব্বী, রাকিব ও সম্পদ। খিলক্ষেতে পরীক্ষা শেষে গাইবান্ধার বাসের জন্য তাঁরা ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার এসে তাঁদের পেছন থেকে জোরে ধাক্কা দেয়। এতে বাকিরা হালকা আহত হলেও সামিউল ইসলাম, মামুন অর রশীদ ও মো. আকাশ গুরুতর আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানায়, দুর্ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান সামিউল, তার ডান পা ভেঙে গেছে। প্রাইভেট কারের আঘাতে মামুন গাড়িটির ওপরে উঠে গ্লাসের ওপরে গিয়ে পড়েন। তাঁরও ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। মারাত্মক জখম হয়েছে আকাশেরও।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. কাইয়ুম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দর এলাকা থেকে আহত অবস্থায় তিনজন হাসপাতালে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে (সামিউল) অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়েছে। তাঁকে ভর্তি করা হবে। বাকি দুজন তুলনামূলক ভালো আছেন। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাসায় থেকে পরবর্তী সময়ে বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে।
সুতরাং, রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর মারা যাওয়ার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Independent Television Website: সাত ছাত্রের ওপর উঠিয়ে দেওয়া হলো প্রাইভেটকার
- Prothom Alo Website: ‘রাস্তার পাশ ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ গাড়িটি আমাদের ওপর উঠিয়ে দিল’
- Rumor Scanner’s Own Analysis