এগুলো টাইটানের ধ্বংসাবশেষের ছবি নয়

সম্প্রতি, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে  গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ডুবোযান টাইটানের ধ্বংসাবশেষ দাবিতে গত ২২ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত একটি গণমাধ্যম এবং ফেসবুকের একাধিক পোস্টে কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম

টাইটানের

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত ছবি ভিডিওর থাম্বনেইলে ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যমুনা টিভি (ইউটিউব)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো টাইটানের ধ্বংসাবশেষের নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি এবং পুরোনো ভিন্ন ঘটনার একাধিক ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, ছবিগুলো প্রচারের সময় টাইটানের ধ্বংসাবশেষের কোনো ছবি প্রকাশই করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ছবি যাচাই ১

Screenshot source: YouTube

যমুনা টিভি তাদের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনের থাম্বনেইলে ডানদিকে যে ছবিটি প্রকাশ করেছে সেটি টাইটান সংশ্লিষ্ট কোনো ছবি নয়৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ছবিটির মূল সূত্র খুঁজে না পেয়ে আন্তজার্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে গত ২৬ জুন প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট নজরে আসে আমাদের।  

রয়টার্স সে সময় নিখোঁজ থাকা টাইটানের খোঁজে নিয়োজিত সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের একজন মুখপাত্রের সাথে কথা বলে। তিনি জানান, তখন পর্যন্ত টাইটানের কোনো ধ্বংসাবশেষের ছবি তারা প্রকাশ করেননি।

Screenshot source: Reuters

পরবর্তীতে গত ২৮ জুন টাইটানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের খবর আসে আন্তজার্তিক গণমাধ্যমে। সেদিনই ধ্বংসাবশেষ পানির নিচ থেকে তুলে আনার দৃশ্য প্রকাশিত হয় অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবিসি, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে।

Screenshot source: ABC

বিবিসির প্রতিবেদনে এসেছে, ২৮ জুনই প্রথমবারের মতো ডুবোযানটির অংশবিশেষ প্রকাশ্যে আসে।

Screenshot source: BBC

অর্থাৎ, যমুনা টিভি গত ২৩ জুন টাইটানের ধ্বংসাবশেষের দাবিতে যে ছবিটি প্রকাশ করেছে সেটি টাইটান সংশ্লিষ্ট কোনো ছবি ছিল না। 

ছবি যাচাই ২

Screenshot source: Facebook

এই ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তজার্তিক সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source: AP

ছবিটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৪ সালের এই ছবিটিতে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সম্ভাব্য একজন ভুক্তভোগীর জুতা দেখা যাচ্ছে। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ছবিটি টাইটানের ধ্বংসাবশেষের নয়। 

ছবি যাচাই ৩

Screenshot source: Facebook

এই ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Prince of Deepfakes (Parody)’ নামক টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ২২ জুলাই “BREAKING: First photograph – Titan titanic submarine implosion debris field.” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত ছবির সাথে ফেসবুকে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ দাবিতে প্রচারিত ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image comparison by Rumor Scanner

টুইটার অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডিপফেক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর সাহায্যে তৈরি ছবি দিয়ে ভুল তথ্য প্রকাশ করা হয়, যা এই অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ছবি এবং বায়োতেই উল্লেখ রয়েছে। 

অর্থাৎ, এই ছবিটিও টাইটানের ধ্বংসাবশেষের ছবি নয়।

মূলত, গত ১৮ জুন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে পাঁচজন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয় টাইটান নামে একটি ডুবোযান। পরবর্তীতে ডুবোযানটির ধ্বংসাবশেষ দাবিতে গত ২২ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত কতিপয় গণমাধ্যম এবং ফেসবুকের একাধিক পোস্টে কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিগুলোর সাথে টাইটানের ধ্বংসাবশেষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পুরোনো ঘটনার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, আলোচিত ছবিগুলো প্রচারের সময় টাইটানের ধ্বংসাবশেষের কোনো ছবি প্রকাশই করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সুতরাং, পুরোনো এবং এআই দিয়ে তৈরি একাধিক ছবিকে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ দাবিতে প্রকাশ করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img