গত ২৬ মে দিবাগত রাতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। রিমালের পূর্বাভাস পেয়েই দেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও ২৬ তারিখের পরীক্ষা স্থগিত করে গত ২৫ মে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি দাবিতে একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় বিজ্ঞপ্তিতে ‘আগামী ২৬/০৫/২৪ ইং রোজ রবিবার পরীক্ষার কারণে ঘূর্ণিঝড় স্থগিত করা হয়েছে।’ লেখা রয়েছে।

ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞপ্তিটি তাদের টাইমলাইনে পোস্ট করে নিজেদের মন্তব্য জুড়ে দিচ্ছেন। Jubayda Islam Jarin নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞপ্তিটি যুক্ত করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যবস্থা। এখন বোঝেন বাংলাদেশের শিক্ষার অবস্থা।’ মোহাম্মদ জাভেদ ভূঁইয়া নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘হায় আফসোস, কোথায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা’।
এমন আরও কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটকে ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ভুয়া বিজ্ঞপ্তিটির এসব পোস্টের মন্তব্যের ঘরেও অনেকেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপর রাগ, ক্ষোভ ঝেড়েছেন। যেমন, ভাইরাল একটি পোস্টের মন্তব্য ঘরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপর ক্ষোভ ঝেড়ে Faizar Rahman নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সোনার বাংলার সুশিক্ষিত মানুষ’। একইভাবে মোঃ আলাউদ্দিন আজাদ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘শিক্ষা ধংশ তো হয়েই গেছে’।
এছাড়াও, সরকারের উপর ক্ষোভ ঝেড়ে Md Salahuddin নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘পাগলের দেশে ছাগল ক্ষমতায় তাই এই অবস্থা’। একইভাবে, M A Salim নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এটাই দুনীতির ফষল তবুও এ জাতির ঘুম ভাঙবে না’।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি বিকৃত করে ‘..পরীক্ষার কারণে ঝড় স্থগিত..’ শীর্ষক লেখা বসিয়ে আলোচিত ভুয়া বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, এটি সার্কাজম হিসেবে তৈরি করে প্রচার করা হলেও পরবর্তীতে আসল বিজ্ঞপ্তি ধরে বিভিন্ন পোস্টে শিক্ষাব্যবস্থা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গত ২৫ মে অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৬ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত ঘোষণা করার কথা বলা হয়। উক্ত বিজ্ঞপ্তির সাথে দাবীকৃত বিজ্ঞপ্তির কোনো মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিজ্ঞপ্তিটি ১৬ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গত ১৬ মে’র একটি বিজ্ঞপ্তির কাঠামোর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তির মিল পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিটির প্রথম দুই লাইন হুবহু এক রেখে পরবর্তী অংশ সম্পাদনা করে প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়লে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভুয়া বিজ্ঞপ্তির সম্পর্কে সচেতন করা ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মূলত, ঘূর্ণিঝড় রিমালকে কেন্দ্র করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তি এডিট করে ‘..পরীক্ষার কারণে ঝড় স্থগিত..’ লেখা বসিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হয়। স্যাটায়ার করে প্রচারিত এ বিজ্ঞপ্তিকে একটা সময় কেউ কেউ সত্য হিসেবে ধরে নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করে পোস্ট ও মন্তব্য করেন। ফলশ্রুতিতে বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হয়ে ওই ভুয়া বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্নের জন্য অসাধু চক্রের ভুয়া বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে একটি নোটিশ প্রকাশ করে।
সুতরাং, ‘পরীক্ষার কারণে ঘূর্ণিঝড় স্থগিত করা হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি স্যাটেয়ার বা ব্যাঙ্গার্থক।
তথ্যসূত্র
- National University: Website
- Rumor Scanner’s Own Research