সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) ও ফেসবুকে একটি ভিডিও সংযুক্ত করে দাবি প্রচার করা হয়েছে, ভিডিওটি নয়ন নামে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির এবং তাকে রাজশাহীর বাগমারার মচমেল গ্রামে জামায়াতে ইসলামী খুন করেছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত দাবিটির স্ক্রিনশট নিয়ে তা ফেসবুকেও প্রচার করা হয়েছে। ফেসবুকে প্রচারিত এরূপ দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহীর বাগমারায় পুকুর থেকে উদ্ধারকৃত লাশটি কোনো হিন্দু ব্যক্তির নয় বরং, এটি নয়ন মিয়া নামের একজন মুসলিম ব্যক্তির লাশ। এছাড়া তার মৃত্যুর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে নাকি তাকে খুন করা হয়েছে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে এমডি ইস্রাফিল পিটু নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল (২২ ডিসেম্বর) প্রথম প্রহরে রাত একটায় প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ফেসবুক পোস্টটির ক্যাপশনে সংযুক্ত ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, “আজ রাজশাহী জেলা বাগমারা উপজেলায় মচমইল গ্রামে নয়ন নামের এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে।”
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে গত ২১ ডিসেম্বরে “রাজশাহীর বাগমারায় পুকুর থেকে ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার” শীর্ষক শিরোনামে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “রাজশাহীর বাগমারায় পুকুর থেকে নয়ন মিয়া (৩৮) নামে এক মাদক সেবী ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। তিনি উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের মচমইল বড়পুকুর গ্রামের আফাজ উদ্দীনের পুত্র।” অর্থাৎ, নিহত ব্যক্তি ও তার পিতার নাম দেখে প্রতীয়মান হয় যে নিহত নয়ন মিয়া হিন্দু নয় বরং মুসলিম ছিলেন।
এছাড়াও, উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, লাশটি গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে দৃষ্টিগোচর হয় এবং পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার নয়ন মিয়া তার মচমইল বাজারের চায়ের দোকানে গিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে বাজার করার জন্য ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে যান। তিনি বাজার করে নিজ দোকানে ফিরার পথে মচমইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুর পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি পানিতে পড়ে যান। পুলিশের ধারনা নয়ন মিয়া মাদক সেবন করে বাজারের ব্যাগ নিয়ে পুকুর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে যেতে পারে। এমনই মন্তব্য করছেন এলাকার সাধারণ মানুষও। তবে কেউ কেউ ধারনা করছেন, নয়নের কাছ থেকে বখাটে লোকজন টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে তাকে পানিতে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। এছাড়াও তার বাজারে চায়ের দোকানটাও ওই সকল বখাটেরা নিজেদের দখলে নিতে পারেন বলে এলাকার লোকজন আশংকা করেছেন। তবে, কেউ যেন কোন অভিযোগ করতে না পারে সেই জন্য পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য প্রস্তুত করেছেন বলেও জানিয়েছে বাগমারা থানার পুলিশ।
পাশাপাশি, বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুল ইসলামের বরাতে উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মাদক সেবনের কারনেই ভ্যান চালক নয়ন মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য লাশটি ময়না তদন্তের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। উক্ত ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
একই ঘটনায় পদ্মা টাইমস২৪ ও সোনার দেশ নামের রাজশাহী ভিত্তিক আরো দুইটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে রাজশাহীর বাগমারা থানার অফিসার ইন চার্জ মোহাঃ তৌহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি প্রচারিত দাবি গুজব নিশ্চিত করে জানান, লাশটি ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত নয়নকে খুন করা হয়েছে এমন কোনো আলামত বা তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, তার (ওসির) জানামতে নয়ন মিয়া মুসলিম। নয়ন মিয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী এমন কোনো তথ্য তিনি (ওসি) শুনেননি।
অর্থাৎ, রাজশাহীতে পুকুর থেকে উদ্ধারকৃত লাশটি মুসলিম ব্যক্তির এবং তার কীভাবে মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে এখন অবধি স্পষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি।
সুতরাং, রাজশাহী বাগমারায় মুসলিম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে খুন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Inqilab – রাজশাহীর বাগমারায় পুকুর থেকে ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার
- Md Israfil Pitu – Facebook Post
- Statement of Mohd. Touhidul Islam, Officer-in-Charge, Bagmara Police Station, Rajshahi
- Rumor Scanner’s analysis