সম্প্রতি, “চ্যানেল টুয়েন্টিফোর থেকে প্রচার। হৃদয় হত্যার আসামিদের ফাঁসি” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রামের রাউজানে নিহত সিবলি সাদিক হৃদয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হয়নি বরং ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে হৃদয়ের হত্যাকারীর ফাঁসির তথ্য জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
শুরুতেই, চট্টগ্রামের রাউজানে চাঞ্চল্যকর সিবলি সাদিক হৃদয় হত্যাকান্ডের ব্যাপারে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার দৈনিক কালেরকণ্ঠের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর “কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয় হত্যা, ২ লাখ টাকা গ্রহণকারী আসামি গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কলেজ ছাত্র হৃদয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় মুক্তিপণ আদায়কারী অংথাই চিং মারমা প্রকাশ অংথোই চিং মারমা বাবু মারমাকে আটক করে পুলিশ।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হারুনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, “গ্রেপ্তারের পর তাকে (অংথাই চিং মারমা প্রকাশ অংথোই চিং মারমা বাবু মারমা) বৃহস্পতিবার জবানবন্দীর জন্য কোর্টে প্রেরণ করা হয়। সে জেলা ম্যাজিস্ট্রে আদালত-এর বিজ্ঞ বিচারক জোনায়েদ আহমেদের কাছে অপহরণের কথা এবং বান্দরবান থেকে অপহৃত পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের দুইলাখ টাকা নিজেই গ্রহণ করে বলে স্বীকার করে।”
এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক মানবজমিনের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর “চট্টগ্রামে মুক্তিপণ আদায়ের পরও কলেজ শিক্ষার্থীকে হত্যা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হৃদয় হত্যা মামলায় অজ্ঞাতসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ১১ই সেপ্টেম্বর এজাহারের প্রথম আসামি উমংচিং মারমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তি অনুসারে ছিন্ন ভিন্ন কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশ হেফাজত থেকে এলাকাবাসী অভিযুক্ত উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এছাড়াও, হৃদয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় আরও দুই আসামি আছুমং মারমা, ঊক্যথোয়াই মারমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাউজান থানার তদন্ত কর্মকর্তা অজয় দেবশীলের বরাত দিয়ে জানানো হয়, “অপহরণে জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
অর্থাৎ, কলেজ ছাত্র হৃদয় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের মধ্যে ঘটনার মূল অভিযুক্ত আসামি উমংচিং মারমা এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে নিহত হন। অভিযুক্ত বাকি আসামিরা বর্তমানে কারাগারে অবস্থান করছেন। উল্লেখ্য, কলেজ ছাত্র হৃদয় হত্যা মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতের কোনো রায় এখনও পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।
ভিডিও যাচাই
আলোচ্য ভিডিওটির মূল উৎসের অনুসন্ধানে, Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই “ফাঁসির মঞ্চে একজনের চিৎকার; অন্যজন নির্বিকার!” শীর্ষক শিরোনামে আপলোডকৃত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের সময় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে থেকে ধারণ করা হয়।
মূলত, চলতি বছরের জুলাই মাসে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সেসময়ের কারাগারের বাইরে ধারণ করা একটি ভিডিও প্রতিবেদনকে সম্প্রতি রাউজানে চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের ভিডিও প্রতিবেদন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, কলেজছাত্র হৃদয় হত্যাকান্ডে অভিযুক্তদের একজন গণপিটুনিতে মারা গেছেন এবং গ্রেফতারকৃত বাকি অভিযুক্তদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও আলোচিত হৃদয় হত্যার ঘটনায় মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আলোচিত হৃদয় হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।