ভিডিওটি ভোলার তজুমদ্দিনে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার নয়, কুমিল্লার মুরাদগরের 

কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারীকে যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মধেই ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিবিসি বংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনায় বিএনপির অঙ্গসংগঠন শ্রমিক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ওই নারীর স্বামী। ভোলার এই ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে এক ব্যক্তিকে মারধর এবং হলুদ জার্সি পড়া এক ব্যক্তি কর্তৃক এক নারীকে যৌন নির্যাতন করতে দেখা যায়।

ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার কামারপট্টি এলাকায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর ও স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক দল ও ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। রোববার (২৯ জুন) সকালে এ ঘটনা ঘটে। তজুমদ্দিন থানার ওসি মো. মহব্বত খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।’ (বানান অপরিবর্তিত)।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার নয় বরং, কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় ধারণকৃত একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩০ জুন ‘নারী নির্যাতনের ঘটনায় নতুন আরেকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে | Rtv News ’ শীর্ষক ক্যাপশনের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিও। ভিডিও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “ভিডিওতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল অভিযুক্ত ফজর আলীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করছে। নির্যাতনের পর তার শরীর, হাত এবং মাথা থেকে জরছে রক্ত। সুমনের সহযোগী অনিক ঐ নারীকে নিজ হাতে বিবস্ত্র করছে, পাশ থেকে রমযান সহ অন্যরা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছে।”

এছাড়া, একাত্তর টিভির ওয়েবসাইটে ‘মুরাদনগরকাণ্ডে আরেকটি ভিডিও ভাইরাল’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিদেনটিতে বলা হয়, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরের পাচকিত্তা গ্রামে ঘরের দরজা ভেঙে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আরও একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে মারধরের সময় ওই নারীকে এক ব্যক্তি বি…ব…স্ত্র করছেন, এমন চিত্র দেখা গেছে। সোমবার (৩০ জুন) সকালে ‘তোর বাপেরা আইছে’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে তিন মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে ফজর আলীকে নির্যাতন করতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে ওই সময় ভিকটিমকে আরেক ব্যক্তি বি….ব…স্ত্র ও মারধর করতে দেখা গেছে’। 

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভোলার নয়। 

তাছাড়া, ভোলা জেলা পুলিশ পরিচালিত ফেসবুক পেজ থেকেও এই বিষয়ে একটি পোস্ট করতে দেখা যায়।

পোস্টটিতে বলা হয়, ‘আজকের কণ্ঠসহ কয়েকটি অনলাইন মাধ্যমে  একটি এডিটেড ভিডিওকে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানার ঘটনা বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ভোলা জেলার তজমুদ্দিন থানায় এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। যাচাই-বাছাই ছাড়া এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা হতে  সচেতন থাকার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’ 

সুতরাং, ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার ভিন্ন ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img