সম্প্রতি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকলে পদত্যাগ করেছেন দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে এক নারীকে সংবাদ পাঠ করতে দেখা যায়। যেখানে তাকে আলোচিত দাবির পাশাপাশি উপদেষ্টাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ সমন্বয়কদের আত্মগোপনে যাওয়াসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে আসার দাবি করতে শোনা যায়।

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত উক্ত দাবির একটি ভিডিওই দেখা হয়েছে প্রায় ৭৯ হাজার ৭৩০ বার। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রায় ৫ হাজার ৪০১ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়াও দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি ৭৩৪ বার শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদত্যাগ করেনি, উপদেষ্টারাও দেশ ছেড়ে চলে যাননি। এছাড়া, হাসনাত-সারজিসসহ সাবেক সমন্বয়করাও আত্মগোপনে যাননি। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাচরিত গুজবের প্রেক্ষিতে গত জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শোডাউন দেয়। উক্ত কর্মসূচি থেকে সেসময় কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় কালবেলায় প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের সংবাদপাঠিকার সংবাদ পাঠ অংশের একটি অংশ কাট করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সংবাদপাঠিকার কথার সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ জানুয়ারি উপদেষ্টারা পদত্যাগ করেছেন শুনেই বেরিয়ে আসে আ.লীগ নেতারা, অতঃপর…শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে উক্ত প্রতিবেদনের সংবাদপাঠিকার সংবাদ পাঠের শুরুর কিছু অংশের হুবহু মিল রয়েছে। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকলের পদত্যাগ, উপদেষ্টাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এবং হাসনাত-সারজিসসহ সাবেক সমন্বয়কদের আত্মগোপনে চলে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত গুজব শুনে নোয়াখালীর চাটখিলে শোডাউন করেন আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে শোডাউন শেষে চাটখিল বাজার থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সহায়তায় পুলিশ ইব্রাহিম খলিল রাসেল ও গোলাম কিবরিয়া লিটন নামের দুজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করে।
একই ভিডিও প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজেও খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুজব শুনে শোডাউন করার অভিযোগে দুইজন আওয়ামী লীগ নেতার আটক হওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পুরোনো সংবাদের অংশবিশেষকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলো সমর্থিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ, উপদেষ্টাদের দেশ ছাড়ার এবং হাসনাত-সারজিসসহ সাবেক সমন্বয়কদের আত্নগোপন সংক্রান্ত এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Kalbela News Youtube Channel: (আর্কাইভ)উপদেষ্টারা পদত্যাগ করেছেন শুনেই বেরিয়ে আসে আ.লীগ নেতারা, অতঃপর…
- Rumor Scanner’s Analysis