শাহবাগে ধর্ষণের শিকার শিশুটি বেঁচে আছে, এই ছবিগুলো ভিন্ন ব্যক্তির

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ছবি সম্বলিত একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, শাহবাগ এলাকায় ১০ বছরের এই মেয়েকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। মেয়েটি ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো।

শিশুটি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহবাগ এলাকায় এক পথ শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা সঠিক হলেও তার মৃত্যুর দাবিটি সঠিক নয় বরং, ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুটি বেঁচে আছে। এছাড়া প্রচারিত ছবিটিও ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুর নয়। প্রকৃতপক্ষে, জিনিয়া নামে ভিন্ন একটি শিশুর ছবি ব্যবহার করে ধর্ষণের শিকার হওয়া পথশিশুর ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে দাবিটির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “শাহবাগে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে পথশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তরুণ আটক” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ঢাকার শাহবাগে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে এক মেয়েশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক তরুণকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি ঘটে ১৫ জানুয়ারি রাতে। আটক তরুণের নাম রায়হান। বয়স ১৯ বছর। পথশিশু মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাটি রমনা থানার আওতায় পড়েছে বলে জানায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তারেকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেল স্টেশনের নিচের একটি ঝুপড়িতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। এ সময় শিশুটির চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে আসেন। তারা রায়হানকে আটক করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় বলে জানান তারেকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে। গতকাল রাতেই (১৫ জানুয়ারি) শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”

আলোচিত ধর্ষণের বিষয়ে আজকের পত্রিকা, কালের কণ্ঠসহ আরো একাধিক গণমাধ্যম থেকে একই তথ্য জানা যায়। তবে, কোনো সংবাদ প্রতিবেদনেই ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুটির মৃত্যু ঘটেছে শীর্ষক দাবিটির উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুকের সাথে কথা বলেছে। তিনি নিশ্চিত করেন, ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুটি খুন হওয়ার দাবিটি ভুয়া।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ধর্ষণের শিকার হওয়া উক্ত পথশিশুর ছবি দাবিতে দুইটি ছবিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে। ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যায়, ছবিটি জিনিয়া নামের এক শিশুর ছবি দাবিতে অনলাইনে অন্তত ২ বছর আগে থেকেই বিদ্যমান আছে। সংযুক্ত অপর ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যায় সেটিও অন্তত ২০২২ সাল থেকেই অনলাইনে প্রচারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম দৈনিক আজকের পত্রিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সিদ্দিক ফারুকের সাথে কথা বলে। তিনি জানান, এই ছবি দুইটি জিনিয়া নামের এক ফুল বিক্রেতার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীও ছবিগুলো জিনিয়া নামের এক শিশুর বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া, এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুকও একই তথ্য জানিয়েছেন।

অর্থাৎ, ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুটি মারা যায়নি। ভিন্ন শিশুর ছবি যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ভিন্ন শিশুর ছবি ব্যবহার করে শাহবাগ এলাকায় সম্প্রতি ধর্ষণের শিকার হওয়া পথশিশুর মৃত্যু ঘটেছে শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img