বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাজ্যকে উদ্ধৃত করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

অন্তত গত ০৩ ডিসেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশে যেকোনো সময় জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে ভ্রমণ সতর্কতা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।

উক্ত দাবিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরূপ প্রতিবেদন : এই সময়, রিপাবলিক বাংলা (ইউটিউব), সংবাদ প্রতিদিন, আজতক, বর্তমান পত্রিকা

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ) ।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা কেবলমাত্র বাংলাদেশে নয় বরং ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশের ক্ষেত্রেই একই ভ্রমণ সতর্কতা অনেকদিন ধরেই জারি করে রেখেছে যুক্তরাজ্য। তাই, এককভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রচারণা বিভ্রান্তিকর। তাছাড়া, যুক্তরাজ্য সাধারণত কোনো অঞ্চলে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করলে তা সবার জন্য প্রযোজ্য হয়। এবার সহিংসতার কারণে বিশেষভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সতর্কতা জারি করা হলেও দেশের অন্য জেলাগুলোতে এ ধরণের বিশেষ কোনো সতর্কতা আরোপ করা হয়নি। পাশাপাশি, যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা অনুযায়ী, বাংলাদেশের চেয়ে ভারত, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানের মতো দেশে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা বেশি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের গভর্নমেন্ট ডিজিটাল সার্ভিস (GDS) কর্তৃক প্রকাশিত gov.uk ওয়েবসাইটের ফরেন ট্রাভেল এডভাইস শাখার বাংলাদেশ অংশের সেফটি এন্ড সিকিউরিটি অংশে দেখা যায়, গতকাল ০৩ ডিসেম্বরে এ বিষয়ে একটি তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জঙ্গিরা বাংলাদেশে হামলা করার চেষ্টা করতে পারে। এবং এক্ষেত্রে কিছু সম্ভাবনা ও উপদেশও দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, জুলাই ও আগস্টে হওয়া আন্দোলনের সহিংসতার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, চুরি, হয়রানিসহ আরো নানা বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য যে, গত কয়েকদিন ধরে এলাকা নিয়ন্ত্রণে সাজেক ও মাচালং এলাকায় সন্তু লারমার জেএসএস ও প্রসীত খিস্যার ইপিডিএফের মধ্যকার গোলাগুলির ঘটনায় সাজেক থেকে পর্যটকরা ফিরতে পারেননি। এরকম সংঘর্ষ প্রায়ই হয়ে থাকে। মূলত এরই প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণের বিষয়ে এমন সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্য।

পরবর্তীতে একই ওয়েবসাইটের অন্যান্য দেশের ফরেন ট্রাভেল এডভাইস অংশ পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায়, কেবলমাত্র বাংলাদেশ নয় বরং সহিংসতা হওয়া বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকা প্রায় সব দেশের ক্ষেত্রেই যুক্তরাজ্য নিয়মিত এরকম জঙ্গি হামলার সতর্কতা দিয়ে থাকে৷ যেমন: এ বিষয়ে ভারতের সেফটি এন্ড সিকিউরিটি অংশে বলা হয়েছে, ভারতে জঙ্গিদের হামলা করার চেষ্টার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এবং এই তথ্যটি প্রায় তিন মাস আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বরে ভারতের ক্ষেত্রে হালনাগাদ করে জানানো হয়েছে, যা এখনও কার্যকর আছে। ক্ষেত্রবিশেষ ব্যতীত ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত, জম্মু কাশ্মীর ও মনিপুরে ভ্রমণ না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, ভারতের ক্ষেত্রে এলইটি, জেইএমসহ একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, বার, বাজার, স্টেশন, বিমানবন্দরসহ আরো নানা জায়গায় হামলা হতে পারে। এছাড়া, প্রতারণা, যৌন হয়রানিসহ আরো নানা বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে। 

এছাড়া, কেবল বাংলাদেশ কিংবা ভারতই নয় বরং ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রেও একইভাবে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গি হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্য স্থান হিসেবে সৈকত রিসোর্ট, হোটেল, বার, রেস্টুরেন্ট, আন্তর্জাতিক বড় আউটলেট থাকা শপিং মল, বৈদেশিক দূতাবাসসহ আরো একাধিক স্থানের কথা বলা হয়েছে এবং এই সম্ভাবনাটি গত ১৫ নভেম্বরে হালনাগাদ করা হয়েছে যা এখনও আছে।

একইভাবে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, কুয়েত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, স্পেনের মতো দেশের ক্ষেত্রেও একইরকমেরই জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা জানিয়ে সতর্কতা স্বরূপ তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে।

Collage: Rumor Scanner

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে সম্ভাবনায় “likely” বলা হলেও ভারত, পাকিস্তান, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সহ আরো কিছু দেশের ক্ষেত্রে এটি “very likely” বলা হয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের চেয়ে ভারত, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানের মতো দেশে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা বেশি।

Screenshot: Gov.UK Foreign travel advice

তাছাড়া, যুক্তরাজ্য যেসব দেশের ক্ষেত্রে এরকম জঙ্গি হামলার সম্ভাবনার বিষয়ে সতর্কতা আরোপ করেনি, সেসব দেশের ক্ষেত্রেও জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে জানিয়েছে

অর্থাৎ, জঙ্গি হামলার ঝুঁকি জানিয়ে এরকম ভ্রমণ সতর্কতা কেবল বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয় বরং বেশ আগে থেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ আরো একাধিক দেশের ক্ষেত্রেও জানানো হয়েছে। 

সুতরাং, জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাজ্যের তথ্য হালনাগাদের বিষয়ে কেবলমাত্র বাংলাদেশকে নিয়ে প্রচারণা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img