টাঙ্গাইলে বেত বাগানে চিতাবাঘের উপস্থিতির দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, “প্রকাশ্যে ঘুরছে চিতাবাঘ, আতঙ্কে এলাকাবাসী” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে।

Claim screenshot from ajkerpatrika website

মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো দেখুন; আজকের পত্রিকা, যমুনা (টাঙ্গাইল শালবনে চিতাবাঘ!), যমুনা (বেত কাটতে গিয়ে চিতাবাঘ দেখেন শ্রমিকরা’, টাঙ্গাইলে আতঙ্ক), কালেরকণ্ঠ, একাত্তর, যায়যায়দিন, বাংলানিউজ২৪, আমাদের সময়, দেশ রুপান্তর, বিডিনিউজ২৪, বার্তা২৪, আলোকিত বাংলাদেশ,ঢাকা প্রকাশ, নয়া শতাব্দী, জনকন্ঠ এবং দৈনিক করতোয়া

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানেএখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া বেত বাগানে চিতাবাঘ বিচরণ করার বিষয়টি সঠিক নয় বরং বেত বাগানে চিতাবাঘের ছবিটি এডিটেড।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাশেদ খান মেনন রাসেল RK Rasel নামের একটি ফেসবুক পেজে “চিতা বাঘের রহস্য উন্মোচন! অবশেষে বন বিভাগের কর্মকর্তার সামনে সেই চিতা বাঘের রহস্য উন্মোচন হলো (ভিডিও) (আর্কাইভ)” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে এক কিশোরকে বলতে শোনা যায়, বেত বাগানে কোনো বাঘ নেই। সে ছবিটি সম্পাদনা করার মাধ্যমে তৈরি করেছে।

এছাড়া ভিডিওটির কমেন্ট বক্সে টাঙ্গাইলের সখিপুরের ৫ নং হাতিবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ খানের সিলযুক্ত সাকিব খান নামের ঐ কিশোরের হাতে লেখা জবানবন্দির একটি কপি খুঁজে পাওয়া যায়।

জবানবন্দিটিতে সাকিব খান বলেন, সে বেতবাগানের একটি ছবি তোলে, পরে অনলাইন থেকে একটি চিতাবাঘের ছবি নিয়ে এডিট করে বেতবাগানের ছবিতে বাঘের ছবি বসিয়ে ফেসবুকে ‘বেতবাগানে চিতা বাঘের আতঙ্ক’ শিরোনামে স্ট্যাটাস দেয়। ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে সে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভি ও ডিবিসি নিউজে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয় বলেও জানায় জবানবন্দিতে। পাশাপাশি এই ঘটনার জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করে।

পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ১৪ সেপ্টেম্বর “বেতবাগানে চিতা বাঘের বিচরণের খবর মিথ্যা বলে স্বীকার কিশোরের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from prothomalo website

এই প্রতিবেদনটিতে হতেয়া বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল আহাদ বলেন, উপজেলার হতেয়া বেতবাগানে চিতা বাঘের বিচরণের খবরটি মিথ্যা। ওই কিশোর বন‍্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছে। ভবিষ্যতে এমন গুজব ছড়াবে না, এই মর্মে সে মুচলেকাতে সই করেছে।

Screenshot from prothomalo website

অপরদিকে মূলধারার জাতীয় পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনে ১৪ সেপ্টেম্বর “সখীপুরে বেতবাগানে চিতাবাঘ দেখার ঘটনা মিথ‍্যা : কিশোরের স্বীকারোক্তি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনটিতে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আলমকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আলম জানান, বেতবাগানে চিতাবাঘের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হলে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ঘটনা স্থলে গিয়ে এ তথ্য মিথ‍্যা বলে প্রমাণ পেয়েছে।

Screenshot from bd-pratidin website

মূলত, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া বেত বাগানের একটি ছবিকে সম্পাদনা করে ছবির মাঝে চিতাবাঘের ছবি বসিয়ে বেতবাগানে চিতাবাঘের উপস্থিতির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে এক কিশোর। এই ছবিটি ভাইরাল হলে সেটি নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও সংবাদ প্রচার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ কিশোর স্বীকারোক্তি দেয় যে, সে এটি সম্পাদনা করে ফেসবুকে প্রচার করেছিল।

সুতরাং, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া বেত বাগানে চিতাবাঘ বিচরণ করার বিষয়টি সঠিক নয়; এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img