বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন?

সম্প্রতি, সুনামগঞ্জে বিএনপির এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দাবি করেন- “বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী না, বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে  যখন সর্বশেষ ভারতে গিয়েছিলেন, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এয়ারপোর্টে গিয়ে তাকে রিসিভ করেছিলেন।”

দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম গুলোতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বক্তব্য  দেখুন, প্রথম আলো, চ্যানেল২৪, ইনকিলাব এবং ঢাকা টাইমস। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন প্রথম আলো, চ্যানেল২৪, ইনকিলাব, এবং ঢাকা টাইমস।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে সর্বশেষ ভারত সফরে খালেদা জিয়াকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিমানবন্দরে স্বাগত জানানো হয়েছে দাবি করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যে বক্তব্য প্রদান করেছেন সেটি সত্য নয় বরং সর্বশেষ ভারতে সফরে দিল্লি বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার মাহবুব হাসান সালেহ এবং হাইকমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

কি- ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর“ Khaleda reaches Delhiশিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from bdnews24 website

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাতদিনের দিল্লী সফরে ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে পৌঁছালে বাংলাদেশের তৎকালীন সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, দিল্লীস্থ বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার মাহবুব হাসান সালেহ এবং হাইকমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা স্বাগত জানায়।

এছাড়া বাংলাদেশের মূলধারার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর “Khaleda Zia tempting history?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খালেদা জিয়াকে ভারত সফরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

Screenshot from daily star website

পাশাপাশি, সেসময় খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন হতে জানা যায়, ওই সফরে খালেদা জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, বিরোধীদলীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই, জাতীয় নিরপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শিবশংকর মেননের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷

Screenshot from DW website

উল্লেখ্য, ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ২০১২ সালে ২৮ অক্টোবর প্রায় এক সপ্তাহের সফরে ভারত যান বাংলাদেশের তৎকালীন সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

Screenshot from BBC website

মূলত, গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি বিমানবন্দরে ভারতীয় রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক অভ্যর্থনা জানানোর বিষয় নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপির এক সমাবেশে বক্তৃতা দানকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দাবি করেন- ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে ভারত সফরে খালেদা জিয়াকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এয়ারপোর্টে গিয়ে রিসিভ করেছিলেন।’ তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সে সময় ভার‍ত সফরে খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়ে ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনার মাহবুব হাসান সালেহ এবং হাইকমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে ভারতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় সফর ও অভ্যর্থনা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিনকে প্রটোকল মেনে সাদরে গ্রহণ করেন ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেলকে প্রটোকল অনুযায়ী সাদরে গ্রহণ করেন ভারতের একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এর ভারতে একমাত্র দ্বিপাক্ষিক সফরে তাকে প্রটোকল মেনে সাদরে গ্রহণ করা হয়েছিলো। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে প্রটোকল মেনেই সাদরে গ্রহণ করেন ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিওকে প্রটোকল মেনে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ভারত সফরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কর্তৃক ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে অভ্যর্থনার একটি ভিডিওকে ভারতের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা দাবিতে প্রচার করা হলে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে ভারত সফরে খালেদা জিয়াকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এয়ারপোর্টে গিয়ে রিসিভ করেছিলেন।’ দাবিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মন্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img