ছবিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নয়

লোকটি কে জানেন?…….ছবির মানুষটি আর কেউ নয়। প্রবাদ প্রতিম পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি ১৮৯১ সালে মৃত্যুবরণ করা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নয় বরং তার মৃত্যুর প্রায় ৫৭ বছর পরে ১৯৪৮ সালের দিকে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক ছাত্রের অধ্যয়নরত অবস্থার ছবি।

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য ফ্রাইডে টাইমস’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর মাদ্রাজে মধ্যরাতের তেল পোড়ানো- ১৯৪৮ (অনুবাদিত) শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ছবিটি উল্লেখপূর্বক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৪৮ সালের দিকে তোলা এই ছবিতে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র আক্ষরিক অর্থে মধ্যরাতে তেল পোড়াচ্ছেন (পড়ার জন্য)।

ঈশ্বরচন্দ্র
Screenshot Thefridaytime

অর্থাৎ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (জন্ম ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০– মৃত্যু ২৯ জুলাই ১৮৯১) এর মৃত্যুর প্রায় ৫৭ বছর পর আলোচিত এই ছবিটি তোলা হয়েছিলো।

পাশাপাশি, ইতিহাস ও জ্ঞানমূলক বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধের সাইট ফারবাউন্ড (ডট নেট) এ ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর “কিভাবে তন্দ্রা আসবে না (অনুবাদিত)” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ছবিটি উল্লেখপূর্বক প্রকাশিত আরও একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯০৫ সালে মস্কোর সিটিন পাবলিশার থেকে প্রকাশিত ভি.এম ডোরোশেভিচ এর “ইস্ট অ্যান্ড ওয়ার” নামক রাশিয়ান একটি প্রকাশনায় ভারতীয় ছাত্রের এই ছবিটি পাওয়া যায়। ঘুম যেন না আসে সেজন্য কোনো কিছুর সাথে চুল বেঁধে পড়তে বসার এই প্রথাটি একটি প্রাচীন প্রথা এবং এটি তখন দেশের অন্যান্য অংশেও প্রচলিত ছিল।

প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী অনুসন্ধান করে, ছবি সংরক্ষণের সাইট উইকিপিডিয়া কমন্সে ‘EugeneZelenko’ নামক এক ব্যবহারকারী কর্তৃক প্রকাশিত; ‘ইস্ট অ্যান্ড ওয়ার’ এর ১১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ছাপানো আলোচিত ছবিটি পাওয়া যায়

Screenshot wikimedia commons website

ছবির ক্যাপশন (প্রেক্ষাপট) হিসেবে লেখা রয়েছে, মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র রাতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পড়তে পড়তে যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন, সে জন্য তিনি চুলের টিকি দেয়ালের পেরেকে বেঁধে রেখেছেন (রুশ থেকে অনূদিত) 

আরো পড়ুনঃ ভিডিওটি বাংলাদেশের মিঠামইনের রাস্তার নয়

এছাড়াও অনুসন্ধানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, ছবিটি ১৯৪৮ সালের দিকে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র কর্তৃক রাতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময়ের। পড়তে পড়তে যেন ঘুম না আসে তাই তিনি তার চুল দেয়ালের পেরেকের সাথে বেঁধে রেখেছেন। এই ছবিটিকেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। এছাড়াও ভি.এম বা ভ্লাস মিখাইলোভিচ ডোরোশেভিচ রাশিয়ার একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব (১৮৬৪-১৯২২)। 

আলোচিত ছবিটি ছাড়াও প্রকাশনাটিতে ব্রিটিশ ভারতের আরও অনেক ছবি রয়েছে, যেগুলি সম্ভবত কোনো রাশিয়ান ফটোগ্রাফার ভারতে ভ্রমণরত অবস্থায় বা ব্রিটিশ উৎস থেকে সংগ্রহ করেছে।

প্রসঙ্গত, আলোচিত ছবিটি নিয়ে ইতোমধ্যে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান আজতক

সুতরাং, মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের ছবিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছবি দাবি করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

Thefridaytime- Burning the midnight oil in Madras

Farbound.net- কিভাবে তন্দ্রা আসবে না 

উইকিমিডিয়া কমন্স- Category:Vlas Mikhailovich Doroshevich – East and War. Images – Wikimedia Commons 

cultural India Ishwar-chandra-vidyasagar

Jugantor- মৃত্যুর ১২৯ বছর পর বিদ্যাসাগরের সমাধিতে স্মৃতিফলক

East and Wa Archive- East & War 

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img