সম্প্রতি, “ইরানের বির্জন্ড জেলার একটা মফস্বল গ্রামে বসবাসকারি একটা প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস ফোরে পড়া ছাত্রী হিজাব না পড়ায় হিজাব রক্ষক বাহিনী মেয়েটার নাক কেটে দেয় এবং চাবুক মারে” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরানে হিজাব না পড়ার কারণে প্রশাসন কর্তৃক স্কুল ছাত্রীর নাক কেটে দেওয়া এবং চাবুক মারার দাবিটি সত্য নয় বরং ২০২২ সালে ইরানের ইসফাহান শহরে দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মধ্যে বাকবিতণ্ডের ঘটনায় আহত এক শিক্ষার্থীর ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ইরানের অনলাইন পোর্টাল ‘asriran’ এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৩ মার্চ “What was the story of the Isfahani student girl with a bloody face?” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২ মার্চে ইরানের ইসফাহান শহরের খানেহ এলাকার একটি স্কুল ছুটির পর দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীর মা অপর শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেয়। যার কারণে অপর শিক্ষার্থী আহত হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেসময় ইরানের একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এমন কিছু সংবাদ দেখুন এখানে এবং এখানে।
প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, উপরে বর্ণিত দুই শিক্ষার্থীর ঝগড়ার ঘটনায় আহত শিশুর ছবিটি সেসময় একই দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিলো। এর প্রেক্ষিতে সেসময় তদন্ত করা হয় এবং তদন্ত থেকেও জানা যায় হিজাব না পড়ার কারণে নয় বরং দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে হওয়া ঝগড়াকে কেন্দ্র করেই শিক্ষার্থীটি আহত হয়।

মূলত, ২০২২ সালের ০২ মার্চ ইরানের ইসফাহান শহরে একটি স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে বাকবিতণ্ডের ঘটনায় এক শিক্ষার্থী আহত হয়। উক্ত ঘটনায় আহত হওয়া শিক্ষার্থীর ছবিকে হিজাব না পড়ার কারণে ইরানের প্রশাসন কর্তৃক এক স্কুল ছাত্রীর নাক কেটে দেওয়া এবং চাবুক মারা হয় দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাসা আমিনি নামের ২২ বছরের এক তরুণীর মৃত্যু হয়। মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং হিজাব আইন বদলে ফেলার দাবি ওঠে।
সুতরাং, ইরানে হিজাব না পড়ার কারণে প্রশাসন কর্তৃক স্কুল ছাত্রীর নাক কেটে দেওয়া এবং চাবুক মারার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Asriran – What was the story of the Isfahani student girl with a bloody face?
- Mashregh News – The film/story of the image of the Isfahani student girl in the virtual space
- What was the story of the Isfahani student girl with a bloody face?
- Fars News – What was the story of the Isfahani student girl with a bloody face?
- Prothomalo – বিক্ষোভের মুখে ইরানে হিজাব আইন পরিবর্তনের ইঙ্গিত