সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের জিহাদ দাঙ্গায় উস্কানি দিয়ে হিন্দু মন্দিরে করআন রাখা ইকবাল কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লিখিত দাবিতে টুইটারে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া ইকবাল কারাগার থেকে মুক্তি পাননি বরং কোনোপ্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি টুইটারে প্রচার করা হচ্ছে।
কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার এর অনলাইন সংস্করণে গত ০২ মার্চ ‘কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার মামলায় ইকবালের ১৬ মাস কারাদণ্ড’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে ১৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবরের ওই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে আরও ১০টি মামলা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে ইকবালকে পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। ৩০ বছর বয়সী ইকবাল কুমিল্লা শহরের মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ২১ অক্টোবর ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অন্য মামলায় পরোয়ানা না থাকলে আদালত তাকে মুক্তি দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ১৬ মাস কারাভোগ করছেন বলে উল্লেখ করেছেন আদালত।
পরবর্তীতে অন্য কোনো মামলায় পরোয়ানা আছে কিনা এই তথ্য জানতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত মার্চে দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় দুর্গাপূজা মণ্ডপে পবিত্র কুরআন শরিফ রাখা আসামি ইকবাল হোসেনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাজা দিয়েছেন আদালত। অর্থাৎ ১ বছর ৪ মাস সাজা পেলেন তিনি। আসামি ইকবাল হোসেন নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করলে মানসিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে আদালত আসামি ইকবালের গ্রেপ্তারের পর থেকে জেলহাজতে থাকা পর্যন্ত ১ বছর ৪ মাস সাজা দেন। তবে এ মামলা থেকে মুক্ত হলেও তার বিরুদ্ধে আরো ১০-১২টি মামলা রয়েছে। তাই এখনই কারামুক্ত হচ্ছেন না ইকবাল।
অর্থাৎ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, একাধিক মামলার আসামি ইকবাল বর্তমানে কারাগারে আছেন এবং তার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখার মামলায় প্রধান আসামি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে বর্তমান সময় (রায় ঘোষণার তারিখ) পর্যন্ত(১৬ মাস) সাজা দিয়েছেন আদালত। এবং অন্য মামলায় পরোয়ানা না থাকলে আদালত তাকে মুক্তি দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। উক্ত বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই ইকবাল আদালত থেকে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে টুইটারে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত মামলা থেকে মুক্ত হলেও তার বিরুদ্ধে আরো ১০-১২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তাই এখনই কারামুক্ত হচ্ছেন না ইকবাল।
সুতরাং, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া ইকবাল কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে টুইটারে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Bhorer Kagoj, কুমিল্লার মণ্ডপে কুরআন : ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় সাজা পেলেন ইকবাল
- The Daily Star, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার মামলায় ইকবালের ১৬ মাস কারাদণ্ড
- Rumor Scanner Own Analysis