সম্প্রতি, সৈকতে পড়ে থাকা একটি মাছকে সি হর্স মাছ দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো সি হর্সের নয় বরং ছবিগুলো অস্ট্রেলিয়ার সি ড্রাগনের।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে গত ০৩ জানুয়ারী ফেসবুকে “Field Naturalists Club of Victoria” নামক গ্রুপে ‘Michele Spilker’ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে সংযুক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত ছবিগুলোর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “গ্রেট ওশান রোডের উরকুহার্টস ব্লাফ বিচে ভেসে যাওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই অবিশ্বাস্য প্রাণীগুলির একটির দিকে কখনই চোখ রাখিনি। সি হর্স না? দুঃখজনকভাবে মৃত কিন্তু বাহ তাই আশ্চর্যজনক কাছাকাছি দেখতে।”

উরকুহার্টস ব্লাফ বিচ অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত।
অর্থাৎ, ছবিগুলো অস্ট্রেলিয়ার একটি সি বিচ থেকে তোলা। তবে পোস্টদাতা এটি সি হর্স কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে National Geographic এর ওয়েবসাইটে ‘Sea Horse‘ নামে একটি প্রতিবেদনে সি হর্সের কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত ছবিগুলোর গঠন এবং রংয়ের মিল পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘Nature’ ওয়েবসাইটের একটি গবেষণা প্রতিবেদনেও সি হর্সের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রতিবেদনের ছবির মিল পাওয়া গেলেও আলোচিত ছবির সাথে মিল পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি সি হর্সের নয়।
ছবির প্রাণীটির নাম কী?
ছবির প্রাণীটির বিষয়ে অনুসন্ধানে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের জাদুঘর ‘Australian Museum’ এর ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে থাকা একটি প্রাণীর ছবির সাথে আলোচিত ছবির প্রাণীর গঠনগত মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে প্রাণীটির নাম ‘Common Sea Dragon’ উল্লেখ রয়েছে।
তাছাড়া, National Geographic এর ওয়েবসাইটে একইরকম ছবি সম্বলিত একটি প্রতিবেদনেও প্রাণীটিকে সি ড্রাগন হিসেবে উল্লেখ পাওয়া যায়৷

পরবর্তীতে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘Getty Images’ এর ওয়েবসাইটেও সি ড্রাগনের একই রকম বেশ কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
এরকম একটি ছবি দেখুন –

এই ছবিটি তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বিষয়ক ফটোগ্রাফার ম্যাট ক্রামিনস (Matt Krumins)৷
আলোচিত ছবিটির বিষয়ে জানতে পরবর্তীতে ম্যাট ক্রামিনসের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনিও ছবিটি দেখে নিশ্চিত করেন, এটি সি ড্রাগনেরই ছবি।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি সি ড্রাগনের।
ছবিটি কক্সবাজারের নয়
ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে কেউ কেউ কমেন্ট করেছেন, ছবিটি কক্সবাজারের।

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটি কক্সবাজার নয়, অস্ট্রেলিয়ার। গত ০৩ জানুয়ারী ‘Michele Spilker’ এর ফেসবুক পোস্টেই বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
এ বিষয়ে ম্যাট ক্রামিনসের কাছে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ছবিটি কক্সবাজারের হওয়া সম্ভব নয়। কারণ এদের (সি ড্রাগন) শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই দেখা যায়। এরা শীতল পানির প্রজাতি।
National Geographic এর ওয়েবসাইটে প্রাণীটির বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য এসেছে।

অর্থাৎ, প্রাণীটির ছবি কক্সবাজার থেকে নয়, তোলা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে।
মূলত, অস্ট্রেলিয়ার একটি সী বিচে চলতি বছরের জানুয়ারীতে একটি মৃত মাছ ভেসে আসে৷ সেই মাছের তোলা ছবিকে পরবর্তীতে সি হর্সের ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সি ড্রাগনের ছবির সাথে আলোচিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বিষয়ক একজন ফটোগ্রাফারও নিশ্চিত করেছেন, ছবিটি সি ড্রাগনের।
সুতরাং, সি ড্রাগনের ছবিকে সি হর্স দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ৷
তথ্যসূত্র
- Michele Spilker: Facebook Post
- National Geographic: Sea Horse
- Nature: The seahorse genome and the evolution of its specialized morphology
- Australian Museum: Common Seadragon
- Getty Images: Sea Dragon
- Statement from Matt Krumins