ফেনীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় মারা যাওয়া ব্যক্তির ছবি দাবিতে পাকিস্তানের ভিন্ন ব্যক্তির ছবি প্রচার

ফেনী সোনাগাজীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় মোহাম্মদ সাঈদ উল্লাহ নামের এক মুয়াজ্জিনের মৃত্যু হয়েছে দাবিতে মেঝেতে পড়ে থাকা পায়জামা পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

 মসজিদে আজান

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ফেনী সোনাগাজীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় মারা যাওয়া মোহাম্মদ সাঈদ উল্লাহর  নয়। বরং, ছবিটি পাকিস্তানের একটি মসজিদে আজান দেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া মাওলানা মাসউদ আজহার নামে এক ব্যক্তির।

অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফেনী সোনাগাজীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় কোনো ব্যক্তি মারা গেছেন কিনা দেখতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘কালবেলা’ এর ওয়েবসাইটটে গত ৯ জুন ‘মসজিদে আজান দেওয়ার সময় মুসল্লির মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় মো. ছায়েদ উল্লাহ (৫০) নামের এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। গত ৯ জুন উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের লন্ডনী পাড়া এলাকার হাফেজ আব্দুর রশিদ বাড়ি জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘নিহতের চাচা সাহাব উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে হাফেজ আব্দুর রশিদ জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম মো. ইয়াসিন আরাফাত আজান দেওয়ার জন্য আসতে না পারায় আমার ভাতিজা ছায়েদ আজান দেওয়ার সময় বজ্রপাতে আইপিএসের শর্ট সার্কিটে বিদ্যুৎস্পর্শে মসজিদে লুটিয়ে পড়েন। পরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।’

গত ১০ জুন আরটিভি নিউজঢাকা পোস্ট এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, এ থেকে এটা স্পষ্ট যে ফেনীর সোনাগাজীতে আজানরত অবস্থায় একজন ব্যক্তি মারা গেছেন।

এছাড়া আলোচিত ঘটনায় কালবেলা, আরটিভি নিউজ ও ঢাকা পোস্ট এর প্রতিবেদনে ফেনীর মৃত ব্যক্তির যে ছবি দেওয়া হয়েছে তার সাথে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ছবির ব্যক্তির চেহারায় ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

মারা যাওয়া ব্যক্তি নিয়ে সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে  প্রচারিত ছবির মধ্যে ভিন্নতা  দেখা যাওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Hafeez Malik’ নামে এক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ০৮ জুন আপলোডকৃত আলোচিত ছবিসহ ব্যক্তিটির একটি স্বাভাবিক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Hafeez Malik

ছবির বর্ণনা থেকে জানা যায়, ব্যক্তিটির নাম মাওলানা মাসউদ আজহার। তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। আরও জানা যায়, তিনি জামিয়া আনোয়ার আল-কুরআন মাদরাসার শিক্ষক  মাওলানা মুহাম্মদ আসগর কোরেশীর ছেলে। ‘Hafeez Malik’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় লোকেশন হিসেবে উল্লেখ আছে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ। এবং তার বাড়ি মুজাফফরগড়ে।

অর্থাৎ, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ছবির ব্যক্তিটি ফেনীরর সোনাগাজীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় মারা যাওয়া ব্যক্তি নয়। 

অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে এসে এটা স্পষ্ট যে ফেনীরর সোনাগাজীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় যে ব্যক্তি মারা যাওয়ার প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে তার দাবিতে যে ছবি প্রচার করা হয়েছে দুইজন সম্পূর্ণ  আলাদা ব্যক্তি। তবে, তারা দুইজনই মসজিদে আজান দেওয়ার সময় মৃত্যু বরণ করেন।

মূলত, গত ৯ জুন ফেনীর সোনাগাজীতে আজান দেওয়ার সময় মোহাম্মদ সাঈদ উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি মারা যায়। এর প্রেক্ষিতে, ফেনী সোনাগাজীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় এক মুয়াজ্জিনের মৃত্যু হয়েছে দাবিতে এক মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তির ছবি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে, রিউরম স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ফেনীর সোনাগাজীতে মসজিদে আজান দেওয়ার সময় মারা যাওয়া ব্যক্তির নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি পাকিস্তানের একটি মসজিদে আজান দেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া মাওলানা মাসউদ আজহার নামে এক ব্যক্তির।

সুতরাং, ফেনীর আজান দেওয়ার সময় এক ব্যক্তির মারা যাওয়ার প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে পাকিস্তানের একটি মসজিদে আজান দেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img