ময়মনসিংহের এক স্কুলে হিন্দু ছাত্রীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরানোর দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, “আফগান হতে কত দেরি পাঞ্জেরী! বাধ্যবাধকতার কারণে হিজাব নিকাব পরিহিতা ময়মনসিংহের হিন্দু স্কুল ছাত্রী৷” শীর্ষক একটি তথ্য একজন শিক্ষার্থীর ছবি যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

পোস্টগুলেতে দাবি করা হয়, দাপুনিয়া কাওয়ালটি ইসলামিয়া হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাধ্যতামূলক হিজাব পরার নিয়মের কারণে হিন্দু শিক্ষার্থীকেও হিজাব পরতে হচ্ছে। ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাপুনিয়া কাওয়ালটি ইসলামিয়া হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক নয় এবং সেই শিক্ষার্থীকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়নি বরং সে স্বেচ্ছায় বান্ধবীদের সাথে মিলিয়ে নেহাত শখের বশে একই রঙের বোরকা বানিয়ে পরেছিলো।

কি-ওয়ার্ড সার্চ করার মাধ্যমে Jamuna Television এর অনলাইন পোর্টালে “সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্রীকে বাধ্য করা হয়নি, শখ করে বোরকা পরেছিল সে” শীর্ষক শিরোনামে আজ ১১ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Jamuna TV

উক্ত ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধানী সে প্রতিবেদনে যমুনা টেলিভিশন উল্লেখ করেছে, 

 সেই শিক্ষার্থী এবং তার বাবা জানিয়েছে, মেয়েকে কেউ বোরকা পরতে বাধ্য করেনি। বরং বান্ধবীদের সাথে মিলিয়ে নেহাত শখের বশে একই রঙের বোরকা বানিয়েছে সে।  

বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে স্কুলের এক নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যমুনার অনুসন্ধান বলছে, ধর্মীয় উস্কানিমূলক স্ট্যাটাসের পেছনে আছে বেসরকারি সংস্থা হাঙ্গার প্রজেক্টের এক কর্মকর্তাও। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষিকা গোপা সরকার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও ছাত্রীর বোরকা পরা ছবি তুলে পাঠান বেসরকারি সংস্থা হাঙ্গার প্রোজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী জয়ন্ত করের কাছে। তিনি এসব সরবরাহ করেন নান্দাইল সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক অরবিন্দ পালকে। এরপর সুইডেনে অবস্থানরত দেব দুলাল মুন্নার ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া হয় উস্কানিমূলক পোস্ট। আর ওই ছাত্রীর ছবি তোলা শিক্ষক গোপা সরকার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ফেসবুকে পোস্ট দেয়া দেব দুলাল মুন্নার বিচার চান তিনি।

সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ও ছবি ব্যাবহার করে এমন কাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবি ভুক্তোভোগী ঐ ছাত্রীর। সে জানিয়েছে, যারা তার ছবি দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক, এমনটাই চায় সে।

এছাড়াও উক্ত বিষয় নিয়ে যমুনা টেলিভিশন একটি ভিডিও প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।

অর্থাৎ, বাধ্যবাধকতার কারণে তার হিজাব পরার দাবিটি মিথ্যা এবং সেই হিন্দু শিক্ষার্থীর স্বেচ্ছায় হিজাব পরার সময়ের একটি ছবি তুলে অপপ্রচার করার জন্য তার একজন শিক্ষক জড়িত বলে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে

রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে ওপেন সোর্স থেকে সেই বিদ্যালয়ে হিজাব বাধ্যতামূলক কি না তা যাচাই করতে গিয়ে দেখে যে, সেই বিদ্যালয়ে হিজাব বাধ্যতামূলক নয়।সেই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের পোস্ট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। সেই পোস্টে সংযুক্ত ছবিতে হিজাব পরিহিত নয় এমন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করা গেছে।

সেই বিদ্যালয়ের নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে গত ৩ মার্চের প্রকাশিত ভিডিও পোস্ট এবং ১৮ মার্চের প্রকাশিত ছবি পোস্টেও একই বিষয় লক্ষ্য করা গিয়েছে।

এই ঘটনায় উস্কানি দেওয়ায় অভিযুক্ত গোপা সরকারের আইডিতেও ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের দুইটি পোস্টেও শিক্ষার্থীদের মাথায় বাধ্যতামূলক হিজাব দেখা যায় নি।

হিন্দু

এছাড়াও রাকিব আহমেদ নামের উক্ত বিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী সেই বিদ্যালয়ে হিজাব কখনও বাধ্যতামূলক ছিলো না বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।

মূলত, এক হিন্দু শিক্ষার্থীর বান্ধবীদের সাথে মিলিয়ে নেহাত শখের বশে একই রঙের বোরকা বানিয়ে পরার বিষয়টিকে স্কুলে বাধ্যবাধকতার কারণে হিন্দু শিক্ষার্থীর হিজাব পরতে হয়েছে শীর্ষক দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়া কাওয়ালটি ইসলামিয়া হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে হিজাব বাধ্যতামূলক নয় এবং বাধ্যবাধকতার কারণে হিন্দু ছাত্রীকে বাধ্য হয়ে হিজাব নিকাব পরতে হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যা।

[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]

  • Claim Review: আফগান হতে কত দেরি পাঞ্জেরী! বাধ্যবাধকতার কারণে হিজাব নিকাব পরিহিতা ময়মনসিংহের হিন্দু স্কুল ছাত্রী
  • Claimed By: Facebook Posts
  • Fact Check: False

[/su_box]

আরও পড়ুন

spot_img