সম্প্রতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কথিত বিজ্ঞপ্তির বরাতে ‘ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে একটানা ছয় মাসে বেশি থাকা যাবে না‘ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন প্রতিবেদন দেখুন – কালেরকণ্ঠ, ডিবিসি নিউজ, ক্যাম্পাস লাইভ২৪, সমকাল, বাংলানিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, আজকের পত্রিকা, ঢাকা পোস্ট, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, রাইজিং বিডি, সাম্প্রতিক দেশকাল, ঢাকা মেইল, জুম বাংলা, রিদ্মিক নিউজ, বাহান্ন নিউজ, সোনালী নিউজ।
গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজ সহ অন্যান্য ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে, এখানে, এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে, এখানে, এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে ও এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে।
যা দাবি করা হচ্ছে
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখার উপসচিব মো. মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরিত পাঁচটি নির্দেশনা সমন্বিত একটি চিঠিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে গণমাধ্যম সহ ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে:
১। সহকারী প্রধান শিক্ষক একনাগাড়ে ০৬ (ছয়) মাসের অধিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। যদি ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে জ্যেষ্ঠতম ৩ জন শিক্ষকের মধ্য হতে যে কোন একজনকে পরবর্তী ০৬ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিতে হবে। তিনিও যদি ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে না পারেন তাহলে তিনি ব্যতীত জ্যেষ্ঠতম ত জন শিক্ষকের মধ্য হতে যে কোন একজনকে পরবর্তী ০৬ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিতে হবে।
২। মামলা, মহামারী বা অন্য কোন কারণে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হলে উপরোপ্রিথিত। নিয়মে ০৬ (ছয়) মাস পর পর ভারপাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরিবর্তন করে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৩। এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জোগতম শিক্ষক নির্ধারণ করতে হবে।
৪। এক মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে পরবর্তী ১ (এক) বছর পর্যন্ত তিনি আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান হতে পারবেন না।
৫। ০৬ (ছয়) মানের অধিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেছেন এমন যারা আছেন তারা এ আদেশ জারির ০১ (এক) মাসের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম ৩ জন শিক্ষকের মধ্য হতে যে কোন একজনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবেন। আর ০৬ (ছয়) মাস পূর্ণ না হলে ০৬ (ছয়) মাস পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। ডা জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হল এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
পাশাপাশি একাধিক গণমাধ্যম এই বিষয়ে প্রকাশিত খবরে উপসচিব মো. মিজানুর রহমান উক্ত বিষয়ে তাদের নিশ্চিত করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখার উপসচিব মো. মিজানুর রহমানের কথিত স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির বরাতে এক নাগাড়ে ৬ মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে না থাকতে পারার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি মিথ্যা এবং প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন সম্পর্কিত উপসচিবের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি দাবিতে প্রচারিত পত্রটি ভুয়া।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে শিক্ষা বিষয়ক অনলাইন দৈনিক শিক্ষা এর ওয়েবসাইটে ‘প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভার নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্যাডে ভুয়া চিঠি!‘ শীর্ষক শিরোনামে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে উপসচিব মো. মিজানুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, চিঠিটিতে ফাইল নম্বর ও স্মারক নম্বর নেই। বর্তমানে ডিজিটাল স্মারক নম্বর থাকে।
এছাড়া মাউশির ওয়েবসাইটে চিঠিটির প্রকাশ হওয়ার তারিখ(দাবিকৃত) ১৩ ফেব্রুয়ারিতে এক নাগাড়ে ৬ মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্বে না থাকতে পারা সংক্রান্ত কোনো চিঠি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে মাউশির ওয়েবসাইটে আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত ভুয়া পত্র‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি থেকে জানা যায়, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারিকৃত স্মারক নম্বর-শিম/শাঃ১১/৩-৯/২০১১/২৫৬, তারিখ: ০৬/০৬/২০১১ এর স্থলাভিষিক্ত উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন বিষয়ে এ বিভাগের উপসচিব জনাব মোঃ মিজানুর রহমান এর নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে জারিকৃত ভুয়া একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, একই স্মারক ও তারিখে স্থলাভিষিক্ত উল্লেখ করে স্মারক নম্বর- শিম/শাঃ১১/৩-৯/২০১১/২৫৬; তারিখ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ লিখে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে এ বিভাগ থেকে কোনো পত্র জারি করা হয়নি।’
এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে প্রতারক চক্র থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার জন্য এবং বর্ণিত ভুয়া পত্রের আলোকে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
মূলত, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখার উপসচিব মো. মিজানুর রহমানের কথিত স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে দাবি করা হয় যে, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক নাগাড়ে ৬ মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকতে পারবে না। পরবর্তীতে এই বিজ্ঞপ্তিটির সূত্রে দেশের মূলধারার একাধিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয় এবং কোনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তবে আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি মাউশি থেকে উক্ত বিষয়টিকে ভুয়া হিসেবে করে চিহ্নিত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বর্ণিত ভুয়া পত্রের আলোকে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করে।
সুতরাং, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটানা ৬ মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।