বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আহ্বান জানিয়ে এক্স পোস্ট করা গুনথার ফেলিংগার ন্যাটোর কর্মকর্তা নয়

সম্প্রতি, ন্যাটোর অস্ট্রিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান গুনথার ফেলিংগার ‘আমাদের ভারতের প্রয়োজন নেই, বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চাই’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন ও ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন ন্যাটোর অস্ট্রিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান গুনথার ফেলিংগার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট করে নিজের এই মতামত তুলে ধরেন গুনথার।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন একাত্তর টিভি, ঢাকা মেইল, বিডি২৪রিপোর্ট, টেকজুম ডট টিভি, এমটিনিউজ২৪, দৈনিক আলোচিক উখিয়াবিডি মর্নিং এবং  দূরবীন নিউজ। 

গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

অন্যান্য ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

গুনথার ফেলিংগারের এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টের স্ক্রিনশট ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।  

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘আমাদের ভারতের প্রয়োজন নেই, বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চাই’ শীর্ষক মন্তব্যকারী গুনথার ফেলিংগার ন্যাটোর কোনো কর্মকর্তা নয়। এছাড়াও অস্ট্রিয়া ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রও নয়। পাশাপাশি ‘ন্যাটোর অস্ট্রিয়া বিভাগ’ নামে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা বা দফতর নেই। প্রকৃতপক্ষে, ফেলিংগার ন্যাটো সম্প্রসারণের পক্ষে সক্রিয় একজন অ্যাক্টিভিস্ট। তিনি নিজেকে ‘অস্ট্রিয়ান কমিটি ফর ন্যাটো এনলার্জমেন্ট’-এর চেয়ারম্যান পরিচয় দিলেও এটি তার ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান।

অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গুনথার ফেলিংগারের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচারিত আলোচিত পোস্টটির সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়াও দেখা যায়, এই এক্স অ্যাকাউন্টের বায়োতে দাবি করা হয়েছে, তিনি ‘অস্ট্রিয়ান কমিটি ফর ন্যাটো এনলার্জমেন্টের চেয়ারম্যান’।

Screenshot: X (Twitter)

পরবর্তীতে গুনথারের বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গুনথার সেসময় নিজেকে ‘ইউরোপীয় কমিটি ফর ন্যাটো এনলার্জমেন্ট’-এর চেয়ারম্যান দাবি করতেন। প্রতিবেদনটিতে রয়টার্স জানায়, গুনথার ফেলিংগারের সঙ্গে মার্কিন সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। তিনি কেবল ন্যাটোতে নতুন দেশ অন্তর্ভুক্তির পক্ষে থাকা একটি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও গুনথার ফেলিংগার নিজেই ইমেইলের মাধ্যমে রয়টার্সকে জানান, তার সঙ্গে ন্যাটোর কোনো সম্পর্ক নেই। তার কোনো টুইটই আনুষ্ঠানিক অবস্থান প্রকাশ করে না। পাশাপাশি ‘ফেলিংগারের সঙ্গে ন্যাটোর কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই’ বলেও সামরিক জোটটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে সেসময় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। 

Screenshot: Reuters 

এছাড়াও গুনথার ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর করা তার এক এক্স পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আমি স্বীকার করছি, ইউরোপীয় কমিটি ফর ন্যাটো এনলার্জমেন্ট আসলে শুধু আমিই!’ 

Screenshot: X (Twitter)

তাছাড়া সেসময় ন্যাটোর সদর দফতরের পাবলিক ডিপ্লোমেসি ডিভিশনের প্রেস এবং মিডিয়া সেকশনের প্রেস অফিসার দানিয়েলে রিজিও মিডিয়াকে নিশ্চিত করেন যে, ফেলিংগারের ন্যাটোর সাথে কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে ‘অস্ট্রিয়ান কমিটি ফর ন্যাটো এনলার্জমেন্ট’ নামের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থার খোঁজ পাওয়া যায়নি।  

Screenshot: OpIndia

পরবর্তীতে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটোর ওয়েবসাইট পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, বর্তমানে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ৩২। তবে উক্ত সদস্য তালিকায় অস্ট্রিয়ার সন্ধান পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, অস্ট্রিয়া ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র নয়। এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ন্যাটোর অস্ট্রিয়া বিভাগ’ নামে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা বা দফতরের সন্ধান পাওয়া যায়নি। 

Screenshot: NATO 

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাতের ঘটনায় গুনথার ফেলিংগার তার এক্স অ্যাকাউন্টে একাধিক পোস্ট করেন। এর মধ্যে ৫ সেপ্টেম্বরের একটি টুইটে তিনি ভারত ভাঙার আহ্বান জানিয়ে খালিস্তানের মানচিত্র শেয়ার করেন। যার ফলে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আইনি নোটিশের ভিত্তিতে এই অ্যাকাউন্টকে ‘ফ্ল্যাগড’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এক্স কর্তৃপক্ষকে ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য এটি সীমিত করার নির্দেশ দেয়। 

সুতরাং, ‘আমাদের ভারতের প্রয়োজন নেই, বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চাই’ শীর্ষক মন্তব্যকারী গুনথার ফেলিংগার ন্যাটোর অস্ট্রিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img