সম্প্রতি গীতা বিশ্বাস নামে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীর কাছ থেকে চাল কেড়ে নেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটিই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে হিন্দুদের অবস্থা।
টুইটারে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে হিন্দুদের অবস্থা দাবিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীর কাছ থেকে চাল কেড়ে নেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং ওএমএসের চাল বিক্রির সময়ে ধারণকৃত একটি ছবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘ঘরে খাবার নেই, ট্রাক থেকে চাল কুড়িয়ে নিলেন বৃদ্ধা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়,
প্রতিবেদনটি থেকে গীতা বিশ্বাসের একটি মন্তব্যও খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে একই গণমাধ্যমে ৬ ফেব্রুয়ারি ‘গীতা বিশ্বাসের পাশে দাঁড়াল জেলা প্রশাসন‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্রাকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা চাল কুড়িয়ে নিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়া গীতা বিশ্বাসকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমওস) ট্রাক থেকে চাল না পেয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব গীতা একপর্যায়ে ওএমএসের ট্রাকে উঠে যান। ট্রাকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চাল কুড়িয়ে দেড় কেজি চাল নেন থলেতে। এ সময় বিক্রেতারা তাঁর থলেটি কেড়ে নিতে চাইলে আশপাশের মানুষের অনুরোধে তাঁকে সেই চাল বিনা মূল্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গীতাকে ২০ কেজি চাল, ১০ কেজি ডাল, ১০ লিটার তেল, ৪ কেজি আলু, ২ কেজি লবণ, ২ কেজি চিনিসহ প্রায় ২ মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন সূত্রে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে ৭ ফেব্রুয়ারি ‘ট্রাক থেকে চাল কুড়িয়ে নেওয়া গীতার বাড়িতে জেলা প্রশাসন‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিওতে গীতা বিশ্বাসের একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়।
সাক্ষাৎকারটিতে গীতা বিশ্বাস বলেন, আজকে তিন বছর ধরে আমার অবস্থা বলার মতো না। এগুলো কষ্টের সীমা নাই, থাকা, খাওয়া, চলাফেরা সবকিছু।
এছাড়া ইংরেজি দৈনিক New Nation সূত্রেও একই ছবি ও তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
এসব প্রতিবেদন ও গীতা বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার সূত্রে তার থেকে চাল কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে যে তথ্য পাওয়া যায়, তার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধানে দৈনিক প্রথম আলোর চিত্রগ্রাহক জুয়েল শীলের সঙ্গেও যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
জুয়েল শীল রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ‘এটা তো খুব বাজে হচ্ছে। এখানে ধর্মের কোনো বিষয় ছিল না। ঐখানে তো চাল ছিলই না৷ শেষ পর্যায়ে চাল যতটুকু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে আর কি সেটাই নিতে গিয়েছিলেন গীতা বিশ্বাস। কারণ, সে ঐদিন চাল নিতে না পারলে ভাত খেতে পারতো না। যেটা ছড়াচ্ছে, সেটা উচিত না। এখানে তো চালের জব্য সবাই-ই গেছে৷ হিন্দু-মুসলিম কিছু না এখানে৷’
মূলত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি চটগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সরকারি কমার্স কলেজের সামনে খোলা বাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রির সময় গীতা বিশ্বাস নামে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী চাল না পেয়ে ট্রাকে উঠে পড়েন এবং ট্রাকের উপর পড়ে থাকা চাল কুড়াতে শুরু করেন৷ এসময় ট্রাকের লোকজন তাঁর কাছ থেকে থলেটি কেড়ে নিতে চাইলে তিনি ট্রাকে বসে পড়েন। তবে পরবর্তীতে আশপাশের মানুষের অনুরোধে তাঁকে সেই চাল বিনা মূল্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রচার হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকেও তাকে সহায়তা প্রদান করা হয়। তবে এই ঘটনায় ধারণকৃত একটি ছবিকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীর কাছ থেকে চাল কেড়ে নেওয়ার দাবিতে প্রচার করে বলা হচ্ছে, এটিই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে হিন্দুদের অবস্থা।
সুতরাং, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে গীতা বিশ্বাস নামের নারীর কাছ থেকে চাল কেড়ে নেওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Prothom Alo(1): ঘরে খাবার নেই, ট্রাক থেকে চাল কুড়িয়ে নিলেন বৃদ্ধা
- Daily Prothom Alo(2): গীতা বিশ্বাসের পাশে দাঁড়াল জেলা প্রশাসন
- Daily Prothom Alo_Youtube: ট্রাক থেকে চাল কুড়িয়ে নেওয়া গীতার বাড়িতে জেলা প্রশাসন
- New Nation: PATHETIC INDEED!
- Conversation with Prothom Alo Photographer